নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলের লাঙ্গুলিয়া নদী। এই নদীটি এলাকার মানুষদের পারাপারে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। এ নদীটি উপজেলার ফুলকি, খাটরা, বল্লা, কাজিপুরসহ আশপাশের ৩০-৩৫ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের ভরসা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও এ নদীতে কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি। জোড়াতালি দেওয়া এক কাঠের সাঁকো দিয়েই গত ৫১ বছর ধরে জীবনের মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় হাজারো মানুষ পারাপার হন।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানের এ জোড়াতালি দেওয়া কাঠের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার কাউলজানী বোর্ড বাজার এলাকায় সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়, কয়েকটি ব্যাংকের শাখা, লুৎফা-শান্তা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কাউলজানী নওশেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হাজারও শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এ কাঠের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন। বিকল্প কোনো রাস্তাও নেই।
অপরদিকে, পাশ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার রামপুর, গান্ধিনা, তেজপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এ কাঠের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। প্রায় ১০-১২ বছর আগে এই নদীটির ওপর এলাকাবাসীরা কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ কমাতে কোনো কার্যকর ভূমিকা কেউই নেয়নি। ফলে ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই জোটেনি এলাকাবাসীর কপালে।
এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে পায়ে হেঁটে পারাপার করা যায়। যানবাহন চলাচল করা একেবারেই কঠিন। জেলা সদরে কোনো রোগী নিয়ে গেলে প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে নিতে হয়। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষের। এতে করে খরচ পড়ছে বেশি ও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
কাঠের সাঁকো পারাপারে আহত উপজেলার খাটরা গ্রামের বৃদ্ধা রোজিনা বেগম (৭০) বলেন, কত মেম্বার, চেয়ারম্যান ও এমপি আসলো-গেলো, অথচ আমাদের ব্রিজ দেখা হলো না। সবাই ভোটের আগে কথা দেয়, পরে কেউ আর কথা রাখে না। এ ব্রিজটার জন্য আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। ২ বার পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছি। এতে বেশ কয়েকদিন ঘরে পড়ে ছিলাম। এ ব্রিজটির হওয়া খুব জরুরি।
স্থানীয় আব্দুল হাই সিকদার বলেন, কাঠের সাঁকো হওয়ার আগে আমাদের নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। এখন শুকনো মৌসুম। নদীর পানি কমে যাওয়ায় নৌকা ব্যবহার করা যায় না। এ সাঁকোটি প্রয়াত সংসদ সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহান করে দিয়েছিলেন। তারপর আর কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। এখন এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের দাবি এখানে একটি ব্রিজ চাই।
ভুক্তভোগী শেফালি বেগম বলেন, দেশের কত জায়গায় কত উন্নয়ন হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় এই ব্রিজটি নির্মাণ আর হলো না। ব্রিজটা না হওয়ায় আমাদের চলাচলে নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে। কাঠের সাঁকোতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতায়াত করতে পারে না। ব্রিজটি নির্মাণ করা হলে আমাদের চলাচলে সুবিধা হতো। সরকারের কাছে দাবি আমরা একটি ব্রিজ চাই।
বাসাইল উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল জলিল জানান, খাটরা গ্রামের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করে। ওই স্থানে স্থায়ীভাবে একটি ব্রিজ হওয়া দরকার। বড় একটি ব্রিজের প্রস্তাব করেছি। অতি গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজটি করছি। দ্রুতই দরপত্র আহবান করা হবে। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারবে।
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম জানান, ব্রিজটি না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। আশা করছি দ্রুতই ব্রিজটি হয়ে যাবে। এ ব্রিজটি করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে
Leave a Reply