মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :

ঘাটাইলে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ২৭৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি। এসব ইটভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ। ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল। হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ। ইটভাটায় দেদার বনের কাঠ পোড়ালেও বন বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ।

ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্যমতে, ঘাটাইল উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ১৪টির। হাইকোর্টে রিট করে চলছে ১৬টি। সম্পূর্ণ অবৈধের তালিকায় রয়েছে ২০টি। আবার অধিকাংশ ভাটার নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।

১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত-২০০১) অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জনবসতিপূর্ণ এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন ও ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ। তবে এ আইন মানা হয়নি ঘাটাইলে।

বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিস থেকে বেশ কয়েকটি ভাটার দূরত্ব ১ থেকে ২ কিলোমিটারের ভেতর। এসব ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, জ্বালানি হিসেবে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ। অথচ জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে স্থাপন করা এসব ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করার কথা। আইনে কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। তবে লোক দেখানো কিছু কয়লা ভাটাগুলোর পাশে রাখা আছে।

যেসব ভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে বন বিভাগ কী ব্যবস্থা নিয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদ রহমান বলেন, ‘ভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি।’

বনের আশপাশে কীভাবে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা? জবাবে তাঁর কথার তীর পরিবেশ অধিদপ্তরের দিকে। উল্টো প্রশ্ন করেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কি ইটভাটা করা সম্ভব?

ভাটা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর কয়লার দাম ছিল প্রায় ২৭ হাজার টাকা টন। এ বছর টনপ্রতি কমেছে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতি টন কয়লা ক্রয় করা হচ্ছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকায়। অপরদিকে প্রতি টন কাঠের দাম মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।

ভাটাগুলোর অবস্থান বনের আশপাশে হওয়ায় সহজেই জুটছে কাঠ। কয়লার তুলনায় দাম কম হওয়ায় বলি দেওয়া হচ্ছে বনকে।

ইট পোড়ানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের তথ্যমতে, প্রতিটি ভাটায় ইট পোড়াতে দিনরাত ৭ থেকে ৮ টন কাঠ প্রয়োজন। এসব কাঠের অধিকাংশই আসে বন থেকে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, ঘাটাইলে মোট বনভূমি ২৫ হাজার ৭১১ একর। মূলত পাহাড়কে কেন্দ্র করে বন গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে সংরক্ষিত বনসহ সামাজিক বনায়নের গাছ।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি রাতেই ট্রাক ভরে বনের কাঠ যায় ইটের ভাটায়।

সরেজমিন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ধলাপাড়া এলাকায় দেখা যায়, সোহান ব্রিকসে কাঠ খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে একটি ট্রাক। এলাকাবাসীর শঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে বন।

সোহান ভাটার মালিক এমদাদ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তবে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা অস্বীকার করেন ভাটার ম্যানেজার আব্দুল বারেক।

তাঁর ভাষ্য, শুধু সোহান ইটভাটাই নয়, পাহাড়ি এলাকার অধিকাংশ ভাটা ইট পোড়াতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছে।

ঘাটাইল ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহজাহান বলেন, বন ধ্বংস করে ইট পোড়ানো সমর্থন করে না সমিতি। এরই মধ্যে ভাটা মালিকদের সমন্বয়ে করা সভায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে নিষেধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান, ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার বেআইনি। অতিদ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে।

কাঠ পোড়ানো এবং পাহাড়ি লালমাটি রাখার দায়ে এরই মধ্যে কয়েকটি ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি ঘাটাইলের ইউএনও ইরতিজা হাসানের।

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, আইন অনুযায়ী ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ। যেসব ভাটা এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি বা ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়)
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102