নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিটি) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণা করে সাফল্য অর্জন করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল মেলবোর্ন ইন্সস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আরএমআইটি) ইউনিভার্সিটির অধীনে এ গবেষণা করেন তিনি।
বিটকয়েন এ ব্যবহৃত ব্লকচেইন টেকনোলজি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রয়োগ করে প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে সার্টিফিকেট ছাড়াই সেন্সর ডাটা নিরাপদ ও সংরক্ষণ কৌশল উদ্ভাবন করেছেন মাভাবিপ্রবির এই শিক্ষক। তার এই উদ্ভাবন রেনসমওয়্যার নির্ভর সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসসমূহকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম।
এই গবেষণাকর্ম খ্যাতনামা আইইইই কমিউনিকেশন ম্যাগাজিন, আইওটি জার্নাল ও এসিএম এশিয়া সিসিএস কনফারেন্স ২০২৩ এ প্রকাশিত এবং স্বীকৃত হয়েছে। এই গবেষণায় সফলতার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি প্রদত্ত সম্মানজনক Higher Degree by Research (HDR) পুরস্কার অর্জন করেছেন।
গত জুলাই মাসের ৭ তারিখ সন্ধ্যায় মেলবোর্ন শহরে অবস্থিত স্টেট লাইব্রেরি অব ভিক্টোরিয়াতে আয়োজিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য প্রফেসর অ্যাঞ্জেলা কার্বন ও এক্সিকিউটিভ ডিন প্রফেসর কারিন ভার্সপুর তাকে এ পুরস্কার প্রদান করেন।
সম্প্রতি তিনি আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি থেকে সাইবার নিরাপত্তার উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত গ্র্যাজুয়েশন প্যারেড শেষে শহরের মারভেল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জাঁকজমকপূর্ণ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পেগি ও’নিল তার হাতে পিএইচডি সনদ তুলে দেন।
ড. জিয়াউর রহমানের কো-সুপারভাইজার প্রফেসর ড. ইব্রাহিম খলিল তার ছাত্রের এ অর্জনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি প্রতি বছর গবেষণা ক্ষেত্রে যারা বিশেষ অবদান রাখছেন তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করে সম্মান সূচক অ্যাওয়ার্ড (Higher Degree by Research Award) প্রদান করে থাকে। আমার পিএইচডি শিক্ষার্থী জিয়াউর রহমান এ পুরস্কার পাওয়ায় ল্যাবের সবাই খুবই আনন্দিত। বর্তমানে সাইবার সিকিউরিটি ল্যাবে যারা ভালো কাজ করছেন, জিয়াউর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম।’
ড. জিয়াউর রহমানের জন্ম রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলায়। ইতিপূর্বে তিনি চায়নার শেনইয়াং খোয়াগং ইউনিভার্সিটি থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
এরপর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি টাঙ্গাইলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্কলারশিপ পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।
এরপর মেলবোর্নে অবস্থিত আরএমআইটি ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণা শুরু করেন এবং এ বছর সফলভাবে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে পোস্ট-কোয়ান্টাম সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করছেন।
ড. জিয়াউর রহমান তার এ অর্জন কে দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আরএমআইটি ইউনিভার্সিটিকে ধন্যবাদ আমার গবেষণা ও স্টুডেন্ট কমিউনিটিতে আমার কাজের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য। আমি আমার সুপারভাইজার, সহকর্মী, পরিবার সবার কাছে কৃতজ্ঞ। দেশ ও দেশের মানুষকে খুব বেশী অনুভব করি। তাই এখানে আমাদের যে কোনো অর্জন, সেটা দেশের সবার।’
সবার কাছে দোয়া কামনা করে তিনি আরও বলেন, যেকোনো গবেষণায় উপযুক্ত সুপারভিশনের পাশাপাশি সময়, মনোযোগ, পরিশ্রম খুবই দরকার। শিক্ষা ছুটি শেষে দেশে ফিরে তার উদ্ভাবিত কৌশল জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রতিরোধে ব্যবহার করতে চান বলেও জানান ড. জিয়াউর রহমান।