নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল পৌর ভবনের সামনে তিন বছরেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ হয়নি। এ নিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর ভাস্কর্য শিল্পীর পরিবর্তে প্রতিমা তৈরির কারিগর দিয়ে ভাস্কর্য করায় তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। পরে তিনি প্রভাব খাটিয়ে রাতের আঁধারে ভেঙে ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়েছে। শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম সিরাজুল হক আলমগীর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পৌরভবনের সামনে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেন ২০২১ সালের ২৭শে জুলাই টাঙ্গাইল পৌরসভার অর্থায়নে পৌরভবনের সামনে ১৫ ফুট উচ্চতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণকাজের শুভ উদ্বোধন করেন মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খান, পৌরসভার প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের দিন পৌর মেয়র সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং তার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পৌরসভার সামনে জাতির পিতার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে। টাঙ্গাইল পৌরসভার নিজস্ব প্রকৌশলী দিয়ে সঠিক নিয়মনীতি মেনে এর ডিজাইন করা হয়েছে। ভাস্কর্য নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি সে সময় সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন উদ্বোধনের দিন।
ভাস্কর্য নির্মাণকাজ শুরু করার দুই মাস পর প্রায় ছয় ফুট পর্যন্ত কাজ হয়। এরপর হঠাৎ এক রাতের আঁধারে তা ভেঙে ফেলা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের পর তা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অবয়ব ফুটে ওঠেনি। অসম্পূর্ণ বিকৃত অবয়বের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকে বিকৃত অবয়বের ছবি প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চাপের মুখে পৌর কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। এরপর ভাস্কর্যটি পুনরায় নির্মাণের কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়নি পৌরসভা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পিয়ন বলেন, রাত ১২টার পর মেয়রের নির্দেশে সকল লাইট বন্ধ করে দিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে ভাস্কর্য ভাঙা হয়। পরে তা ময়লার গাড়িতে করে ভাগাড়ে ফেলা হয়।
সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য মেয়র পেশাদার কোনো ভাস্কর্যের শিল্পী নিয়োগ না করে মূর্তি বানানোর একজন সাধারণ কারিগর নিয়োগ করেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। ভাস্কর্যটি নির্মাণের শেষ পর্যায়ে এসে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত চেহারা ভাস্কর্যে ফুটে ওঠেনি। বরং অনেকটা বিকৃতভাবে ফুটে উঠেছে এটি। এ ঘটনা জানাজানির পর পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর তড়িঘড়ি ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা বলেন, পৌরসভার বিপুল অর্থ ব্যয় করে জাতির জনকের বিকৃত ভাস্কর্য নির্মাণ বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানোর পরিবর্তে তাকে অবমাননা করার শামিল। তাছাড়াও বঙ্গবন্ধু খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।
তাকে নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত পৌরসভা এককভাবে নিতে পারে না। ভাস্কর্য নির্মাণের ব্যাপারে সকলের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত ছিল। জাতির জনক আমাদের অহংকার। তার নির্দেশে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে কোনো গাফিলতি মেনে নেয়া আমাদের জন্য কষ্টকর বিষয়। বিকৃত অবয়বের ভাস্কর্য নির্মাণের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সোচ্চার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাংস্কৃতিক ও নাট্যকর্মী সাম্য রহমান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে যারা ভাস্কর্য শিল্পে অভিজ্ঞ তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত ছিল। আমি জানি না মেয়র সাহেব তা করেছিলেন কিনা। তাছাড়া বিকৃত ভাস্কর্য নির্মাণের পেছনে ব্যয় হওয়া পৌরবাসীর করের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের দায়ভার এখন কে নিবে।