মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :

ঘাটাইলে চলছে বনের জমি দখলের মহোৎসব

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪
  • ১৪১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার চার ভাগের তিন ভাগই বনভূমি দ্বারা বেষ্টিত। এই বনভূমি শাল, গজারি, মেহগনি, আকাশমণিসহ বিভিন্ন ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিক বনায়ন। কিন্তু বন বিভাগে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে রাষ্ট্রীয় এই সম্পদ হরিলুট করছেন বলে সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। স্থানীয় যারা তাদের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ অবস্থায় সচেতন মহল বলছেন, বন বিভাগের জমি কিছু ক্ষেত্রে অসচ্ছল, দরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে লিজ-বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। এর বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে লিজ-বরাদ্দ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ওই কর্মকর্তারা বিভিন্নজনের কাছ থেকে নানা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের ঘর-বাড়ি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। কর্মকর্তারা যেন রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন। এলাকাবাসীর দাবি সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই বনভূমি রক্ষা করা দেশের স্বার্থে আমাদের দাবি।

বন বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন অসাধু তৎপরতার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ওইসব কর্মকর্তারা পাহাড়ি টিলার মাটি কাটতে সব রকমের সহযোগিতা, বন খেকোদের বনের মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করতে সহযোগিতা করছেন।

স্থানীয়দের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বনের জায়গায় স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের পথ তৈরি করে দেয়াসহ বনজ সম্পদ ও বনভূমি বিলীন করে দিতে যা যা প্রয়োজন সব কিছুই তারা করছেন। ওপেন সিক্রেট। দেখার কেউ নেই। সরজমিন দেখা গেছে, উপজেলা বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জের বিভিন্ন বিটে সরকারি জায়গায় চলছে অবৈধভাবে ঘর-বাড়ি দালান নির্মাণের মহোৎসব। স্থানীয়রা বলছেন, বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে তোলা হচ্ছে এসব স্থাপনা। ঘাটাইলের ঝড়কা বিটের ৩০০ গজ পশ্চিম-দক্ষিণে আবদুল আজিজ ওরফে কাশু নামের এক ব্যক্তি দালান নির্মাণ করছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা এসব সিন্ডিকেটের কথা অকপটে স্বীকার করেন। অনেকে আবার ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। কারণ কোনো কথা বলতে গেলেই তা বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়।

এজন্য তাদের খেসারতও দিতে হয়। পড়তে হয় বন বিভাগের মিথ্যা মামলার জালে। এমনকি বিনা কারণে হাজতবাসও করতে হয়। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বনের মামলায় বন সংশ্লিষ্ট ছাড়া আর কারও সাক্ষীর দরকার হয় না। ফলে তারা খুব সহজে হয়রানি করতে পারেন। বন কর্মকর্তাদের এমন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কামালপুর এলাকার নিরীহ এক নারী চা বিক্রেতাকে হাজত খাটতে হয়েছে বহুদিন। ঘাটাইলের ৬টি বিটে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঝড়কা এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান ৭-৮ বছর আগেও এই (ঝড়কা) বিটের বিট অফিসার ছিলেন। ওই সময় তাকে ম্যানেজ করে শত শত লোক ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে বসবাস করছেন। এদিকে বনের জায়গায় কীভাবে ঘর উঠাচ্ছেন জানতে চাইলে আবদুল আজিজ ওরফে কাশু বলেন, এ জমিটি অনেক আগে থেকেই আমার দখলে রয়েছে। আমি এখন ঘর উঠাচ্ছি। এ কথা বলেই তিনি দ্রুত সটকে পড়েন। পরে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। জানা গেছে, বন কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান আবারো রেঞ্জারের দায়িত্ব নিয়ে ফিরে এসেছেন। এখন ৬টি বিট তার হাতের মুঠোয়।

ঝড়কা বিটের জমিতে কাশু নামের এক ব্যক্তি ভবন তুলছেন- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াদুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আমি ঝড়কা বিট অফিসারকে বলে দিয়েছি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝড়কা বিট অফিসার হেলাল উদ্দিন কোনো পদক্ষেপই নেননি। অন্যদিকে গত দুই মাস আগে বটতলি বিটের আমতলি নামক স্থানে রাস্তার মোড়ে ছামাদ নামে এক ব্যক্তি বনের জায়গায় ঘর উত্তোলন করেন। অথচ ওই জায়গায় সূর্য মিয়া নামে এক ব্যক্তি ঘর ওঠালে তা ভেঙে দেন বিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। অভিযোগ রয়েছে, তার একদিন পরই বিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ছামাদ রাতের আঁধারে ঘর উত্তোলন করে দখল করে নেন। এভাবেই চলছে বন দখলের মহোৎসব। এ ব্যাপারে বটতলি বিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার তার অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হয়। রিং বাজলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। স্থানীয়রা আরও বলছেন, পাহাড় ও বনখেকো ফরেস্টার ওয়াদুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা সচেতন মহলের করা অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তদন্ত করলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে। এসব অভিযোগের বিষয়ে টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বন বিভাগের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে- এটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। আমরা নিয়মিত মামলা দিচ্ছি। আবার আমাদের কাছে বিভিন্ন তদবির আসে, এর নামে তার নামে মামলা দেবেন না। আমি যতটুকু জানি সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইল বন বিভাগের জরিপ অনুযায়ী, ঘাটাইল উপজেলায় বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭৮৫ একর। এরমধ্যে দখল হয়ে গেছে প্রায় এক হাজার ৯শ’ একর বনভূমি। যেখানে দখলদারের সংখ্যা ৫ হাজার ৪২১ জন। অথচ ১৯২৭ সালের সংশোধিত বন আইন এবং ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সংরক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বা পরিচালনা না করার নির্দেশনা রয়েছে।

সুত্র-মানবজমিন

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি বা ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়)
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102