নিজস্ব প্রতিনিধিঃ প্রতিবন্ধি কিশোরীর ভাতার টাকা হাতিয়ে নেয়া কর্মচারী মেহেদীর বিরুদ্ধে এখনও শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেননি টাঙ্গাইল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। অসংখ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার ওই সংবাদ প্রচারের পরও রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
কাউন্সিলরের ভাতিজা ও কর্মচারী প্রীতির কারণে রাষ্ট্রীয় ভাতার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িতের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ তুলছেন অনেকেই।
প্রতিবন্ধির ভাতার টাকা আত্মসাতে জড়িত স্থানীয় সরকারের একজন কর্মচারী বিনাবিচারে পাড় পেয়ে গেলে অন্যান্য কর্মচারীর মধ্যে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
মেহেদী (২২) টাঙ্গাইল পৌরসভার পানি সরবরাহ কেন্দ্র ১ এ নলকূপ মিস্ত্রি পদে কর্মরত। তিনি টাঙ্গাইল পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের রবি মিয়ার ছেলে ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হোসেনের ভাতিজা। অভিযুক্ত মেহেদীর বাবা রবি মিয়া কাউন্সিলর ফারুক হোসেনের ফুফাতো ভাই।
প্রতিবন্ধি কিশোরীর ভাতার টাকা আত্মসাতকারী পৌরসভার স্টাফ, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। অসংখ্য সংবাদ মাধ্যমে এ অভিযোগে সংবাদ প্রচার পাওয়ার পরও ওই স্টাফ মেহেদীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়াটা আরও বেশি কষ্টদায়ক। মেহেদীর স্বীকার বা অস্বীকারের উপর আস্থার বিষয় নয় এটা। এতদিন যাবৎ প্রতিবন্ধির ভাতার টাকা উত্তোলনকৃত নম্বরটি কার যাচাই বাছাই করলেই, প্রকৃত অপরাধী সনাক্ত সম্ভব বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসি। দ্রুত অধিকতর তদন্ত ও প্রতিবন্ধির ভাতাখেকো মেহেদীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, অলোয়া তারিনীর মো. লাল মিয়া ও লাকী বেগম দম্পতির বাক প্রতিবন্ধি মেয়ে মোছা. লাবনী আক্তার (২২)। লাল মিয়ার বাক প্রতিবন্ধি কিশোরী মোছা. লাবনী আক্তারের প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ডটি করে দেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারুক হোসেন। পৌরসভার পানি সরবরাহ কেন্দ্র ১ এ নলকূপ মিস্ত্রি পদে কর্মরত মেহেদী কাউন্সিলর ফারুক হোসেনের ভাতিজা ও পৌরসভার কর্মচারী হওয়ার সুযোগ নিয়ে ভাতার কার্ডটি করার দায়িত্ব নেন মেহেদী। কৌশলে ভাতার কার্ডে মেহেদী নিজ নামে নিবন্ধনকৃত নগদ নম্বরটি ব্যবহার করেন ও ভাতার টাকা আত্মসাত করে আসছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্ত মেহেদী আত্মসাতকৃত ভাতার টাকা ফেরত দিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন প্রতিবন্ধি কিশোরীর বাবা। এরপরও প্রতারক স্টাফ মেহেদী কেন বরখাস্ত হয়নি, এ নিয়ে চরম সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ৯ নং ওয়ার্ডবাসি।
জেলা সমাজ সেবা অফিস সূত্র জানায়, মাসে ৮৫০ টাকা ভাতা পাচ্ছেন প্রতিবন্ধিরা। ভাতাভোগীর নগদ একাউন্টে তিন মাস অন্তর অন্তর ২৫৫০ টাকা জমা হয়।
প্রতিবন্ধি কিশোরীর বাবা লাল মিয়া বলেন, সংবাদ প্রচার হওয়ার কারণে মেহেদী ভাতার টাকা বাবদ ১৮ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। এছাড়া ভাতাকার্ডে মেহেদী নিজ নম্বরের পরিবর্তে আমার নম্বরটা স্থাপন করেছে। আশা করছি এখন থেকে ভাতা পেতে আমাদের আর সমস্যা হবে না।
প্রতিবন্ধির কিশোরীর ভাতার টাকা আত্মসাত বা ফেরত দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মেহেদী।
৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফারুক হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধির ভাতার আত্মসাতকৃত টাকা পৌরসভার স্টাফ মেহেদী ফেরত দিয়েছে, এমন খবর আমি পায়নি।
শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা বরাবর যোগাযোগ করলেই উত্তোলনকৃত প্রতিবন্ধি ভাতার টাকা নেয়া নম্বরটি সনাক্ত করা যাবে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল সমাজ সেবা উপ-পরিচালক শাহ আলম।
বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর।