নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ‘জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রেলওয়ে কলোনীতে বাল্য বিবাহ বন্ধ করার সময় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা স্ত্রীসহ বেশ কয়েজন।
এতে ৩ পুলিশ সদস্য হামলার শিকার হয়। পরে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও ২০ লিটার দেশীয় মদ উদ্ধার ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতার স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ।
আটক মোছা: লাখি খাতুন রেলওয়ে কলোনী মহল্লার আওয়ামীলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম রানার স্ত্রী।
শনিবার (২০ এপ্রিল) রাত ১০ টার দিকে সিরাজগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক ব্রজেশ্বর বর্মন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে সদর উপজেলার রেলওয়ে কলোনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা দায়ের করেছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে জরিনা বেগম নামে একজন অভিযোগ করে যে তার নাবালিকা মেয়ে নদী খাতুন (১৪) কে তার স্বামী সাইদুল ইসলাম বসতবাড়িতে আটকে রেখে বাল্যবিবাহ দিচ্ছেন। এজন্য তার আইনি সহায়তা প্রয়োজন। পরে জরিনা বেগম থানায় গেলে সঙ্গে করে অফিসার ইনচার্জ এর নির্দেশক্রমে সিরাজগঞ্জ সদর থানার এস আই ব্রজেশ্বর বর্মনসহ সঙ্গীয় অফিসার ও নারী ফোর্স রেলওয়ে কলোনীর সংবাদদাতার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে বাল্যবিবাহের সত্যতা পায়।
পরে পুলিশ বাল্যবিবাহ না দিতে নিষেধ করলে সংশ্লিট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বললে একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পৌর এলাকার ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রানার নেতৃত্বে পলাতক আসামী সাইদুল ইসলাম (৪০), টুনি বেগম (৪১), আমেনা বেগম (৩৫), ইব্রাহিম (২৭), রেজা (৩০), বাবু ওরফে বড়বাবু (৩০), আশিক (২৫), নুর ইসলাম (৪৬), আসলাম (৩৫), হাসানসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জন পুলিশের উপর চড়াও হয় এবং একপর্যায়ে এস আই ব্রজেশ্বর বর্মনসহ তার সাথে থাকা অফিসার ও নারী পুলিশকে ঘিরে ধরে হামলা করে। এসময় তার সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেলটি ভাংচুর করে। সংবাদদাতা জরিনাসহ তার সাথে থাকা ছেলে জীবন (১৬) ও নাবালিকা মেয়ে নদী খাতুন (১৪) কেও মারপিট করে।
একপর্যায়ে পলাতক আসামীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের ঢিল ছুড়লে ইটের আঘাতে এস আই ব্রজেশ্বর বর্মনসহ তার সাথে থাকা অফিসার ও নারী পুলিশ আহত হয়। পরে সঙ্গে থাকা বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে থানায় সংবাদ দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছালে আসামীরা পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে আসামী রানার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার স্ত্রীকে বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র ও ২০ লিটার চোলাই মদসহ গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার হওয়া আলামতগুলোর মধ্যে ৩ টি তলোয়ার, ২টি বড় ছোড়া ও একটি বল্লম রয়েছে।
সদর থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) ব্রজেশ্বর বর্মন বলেন, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছায়। এসময় সরকারী কাজে বাঁধা ও পুলিশের মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। এতে এএসআই মঈদুল ইসলাম, নারী কনেষ্টেবল ফেরদৌসী রহমান আহত হয়েছে। পরে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এবিষয়ে ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রানার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব্য হয়নি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাল্য বিবাহ বন্ধের সময় পুলিশের উপরে হামলার নেতৃত্বকারী আমিনুল ইসলাম রানার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। এসময় হামলাকারীর স্ত্রী লাখি খাতুনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। আটক আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।