নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল বনবিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জের বিভিন্ন বিটে ফরেষ্টের জায়গায় চলছে ঘর-বাড়ি দালান নির্মানের মহোৎসব। স্থানীয়রা বলছেন বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে তোলা হচ্ছে এ সব স্থাপনা।
সরেজমিনে ঘাটাইলের ঝড়কা বিটের ৩০০ গজ পশ্চিম-দক্ষিনে আব্দুল আজিজ কাশু নামের জনৈক ব্যাক্তি দালান নির্মান করছেন। স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে তারা মুখ খুলতে রাজি হননি কেউই। কারণ হিসাবে জানা যায়, কোন কথা বলতে গেলেই বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যাবে। আর এজন্য খেসারত বন বিভাগের মিথ্যা মামলায় হয়রানি। এমনকি বিনা কারণে হাজতবাস। কারণ বনের মামলায় বন সংশি¬ষ্টদের ছাড়া আর কারো সাক্ষীর দরকার পড়ে না। আর বন কর্মকর্তাদের এ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কামালপুর এলাকার নিরীহ এক নারী চা বিক্রেতাকে হাজত খাটতে হয়েছে। এভাবে ঘাটাইলের ৬টি বিটে শত শত মানুষ বনের মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঝড়কা এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান ৭/৮ বৎসর আগে এই ঝড়কা বিটের বিট অফিসার ছিলেন। ওই সময় তাকে ম্যানেজ করে এখানে শতশত লোক ঘর উঠিয়ে বসবাস করছে।
ফরেষ্টের জায়গায় কিভাবে ঘর উঠাচ্ছেন জানতে চাইলে আব্দুল আজিজ কাশু বলেন, এ জমিটি অনেক আগে থেকেই আমার দখলে রয়েছে। আমি এখন ঘর উঠাচ্ছি। একথা বলেই তিনি দ্রুত চলে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাক্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। আবার তিনি এসেছেন রেঞ্জারের দায়িত্ব নিয়ে। এখন ৬টি বিট তার হাতের মুঠোয়। এ যেন ‘ভালুকের হাতে খোন্তা’।
ঝড়কা বিটের বনের কাশু নামের এক ব্যাক্তি বিল্ডিং তুলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জার ওয়াদুদুর রহমানকে বলেন, শুনেছি, বিষয়টি আমি ঝড়কা বিট অফিসারকে বলে দিয়েছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝড়কা বিট অফিসার হেলাল উদ্দিন কোন পদক্ষেপ নেননি। এদিকে গেল দুই মাস আগে বটতলি বিটের আমতলি নামক স্থানে রাস্তার মোড়ে ছামাদ নামে এক ব্যাক্তি বনের জায়গায় ঘর উত্তোলন করেন। অথচ ওই জায়গায় সুর্য্য মিয়া নামে এক ব্যাক্তি ঘর উঠালে তা ভেঙ্গে দেন বিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। অভিযোগ রয়েছে তার একদিন পরেই বিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ছামাদ নামে এক ব্যাক্তি রাতের আধারে ঘর উত্তোলন করে দখল করেন। এভাবেই চলছে ঘাটাইলে বন দখলের মহোৎসব।
এ ব্যাপারে বটতলি বিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার তার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে রিং বাজলেও তিনি ধরেননি।
স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড় ও বন খেকো ফরেষ্টার ওয়াদুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত এলাকাবাসির অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি-দমন কমিশন কিংবা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তদন্ত করলে কেচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তারা।
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, বন বিভাগের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে এটাতো নিরন্তন প্রক্রিয়া। আপনারা আপনাদের জমি ধ্বংস করবেন সরকারি জমি। আমরা কি করছি আমরাতো নিয়মিত মামলা দিচ্ছি। আবার বিভিন্ন তয়তদবির আসছে এর নামে মামলা দিবেন না। আমি যতটুকু জানি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা মামলা দিচ্ছি। মামলার বিরুদ্ধে তদবির হচ্ছে বিভিন্ন সাংবাদিক মহল বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরতেছে। ঝড়কা বিটের ৩০০ গজের মধ্যে বনের জায়গায় বিল্ডিং তোলা হচ্ছে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে দেখি এটা কার জায়গা, বনের জায়গা কিনা।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের জরিপ অনুযায়ী, ঘাটাইল উপজেলায় বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭৮৫ একর। এর মধ্যে দখল হয়ে গেছে প্রায় এক হাজার ৯শ একর বনভূমি। যেখানে দখলদারের সংখ্যা ৫ হাজার ৪২১ জন। অথচ, ১৯২৭ সালের সংশোধিত বন আইন এবং ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে সংরক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বা পরিচালনা না করার নির্দেশ রয়েছে।