আলকামা সিকদারঃ আনারস রসালো ও সুমিষ্ট ঘ্রাণ সমৃদ্ধ একটি ফল। হাটবাজারে মৌসুমি ফলের ভিড়ে সুমিষ্ট ঘ্রাণ আর স্বাদের ভিন্নতার কারণে আনারসের পরিচিতি ও চাহিদা রয়েছে সবার কাছে। আনারস মানেই মধুপুর। দেশী জাত ছাড়াও ফিলিপাইন জাতের আনারসের আবাদ হয় এখানে। বস্তুত টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারস সারা দেশেই জনপ্রিয়। তাই মধুপুরকে আনারসের রাজধানীও বলা হয়।
দেশের বিশেষ ভৌগোলিক পরিবেশ ও পাহাড়ি এলাকা মধুপুর গড়ের লালমাটির উঁচুনিচু টিলায় আনারসের আবাদ হয় বহু বছর আগে থেকেই। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গারো সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রথম আনারস আবাদ শুরু করে মধুপুরে। ফলন আশানুরূপ হওয়ার কারনে মধুপুর উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ও জামালপুর সদরের কিছু পাহাড়ি এলাকায় আনারসের চাষ ছড়িয়ে পড়ে। এবার এ সব উপজেলায় প্রায় ২৩ হাজার একর এলাকায় আনারসের চাষ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়। শুধু মধুপুর উপজেলাতেই আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৮৯৪ একর জমিতে। মধুপুরের জায়েন্টকিউ, হানিকুইন এবং জলডুগি জাতের আনারস আবাদ হলেও জায়েন্টকিউ জাতের আনারসই সবার শীর্ষে। এ ছাড়াও নতুন জাত ফিলিপাইন থেকে আনা এমডি-২ জাতের আনারসও সবার মন কেড়েছে। ফিলিপাইন থেকে আনা হলেও এ জাতের আনারস মধুপুরের মাটি ও জলবায়ুর সাথে একেবারে মিশে গেছে।
সাধারণত মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাজারে আনারস আসা শুরু হয়। পাওয়া যায় টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এখন মধুপুর উপজেলার প্রসিদ্ধ সকল বাজারেই রয়েছে আনারসের বিপুল সরবরাহ। এখন চলছে আনারসের রমরমা ভরা মৌসুম।
হাটগুলো এখন আনারসে সয়লাব। প্রতিদিন এসব বাজার থেকে শত শত ট্রাকে আনারস চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি প্রায় ৬২টি গ্রামের মানুষের প্রধান অর্থনৈতিক অবলম্বন আনারস চাষ। আনারস চাষ, পরিচর্যা, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণসহ গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত রয়েছে।
আনারস চাষে পানি বা সেচ ব্যবস্থার প্রয়োজন না হলেও এবারের খরার কারনে ফলন তেমন ভালো হয়নি। সার প্রয়োগ করা হলেও বৃষ্টির অভাবে সারের কার্যকারিতা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি।
গারোবাজার হাটে কথা হয় মধুপুরের জয়নাতলী গ্রামের আনারস চাষি আ: হান্নান শিকদারের সাথে। তিনি জানান, এবার আনারসের ফলন তেমন ভালো না হলেও আশা করা যাচ্ছে দাম আশানুরূপ পাওয়া যাবে। দুই-একদিনে বৃষ্টিতে বাজার কিছুটা কমলেও রোদের প্রখরতা বাড়লেই আবার চড়া হয়ে যাবে দাম। যে আনারস ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দিনের তাপমাত্রা বাড়লেই সে আনারসের দাম ৪০-৪৫ টাকা হয়ে যাবে।
মহিষমারা গ্রামের নিরাপদ ফল চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক সানোয়ার হোসেন জানান, অর্গানিক পদ্ধতিতে ফল চাষ এখন সময়ের দাবি। তিনি নিজে এবং মধুপুরের আরো ৫৫ জন বড় কৃষক এখন অর্গানিক পদ্ধতিতে আনারসের আবাদ করছে। যখন আমরা শতভাগ কৃষক অর্গানিক পদ্ধতিতে আনারস আবাদ করতে পারব তখনি গ্রাহকদের নিরাপদ রাখতে পারব এবং আগের আনারসের স্বাদ ফিড়িয়ে আনতে পারব।