হাবিবুর রহমানঃ আনারসের রাজধানী টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চল। লাল মাটির এ গড়ে রয়েছে আনারস কলাসহ নানা ফল ফসলের বাগান। এছাড়াও বনের পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে প্রচুর আগাছা জাতীয় ঘাস। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় জগত বেড় নামের ঘাস বা আগাছা। শটি গাছের পাতা, বড় বড় আগাছার চাহিদা বেশি। এ অঞ্চলে এসব আগাছা প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় বলে আগাছা বিক্রির পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে অনেকেই। আগাছা সংগ্রহ করতে কোন খরচ নেই বিধায় মধুপুর গড় এলাকার অনেকেই আগাছা বিক্রির পেশাকে বেছে নিয়েছে। আর আগাছা বিক্রি করে চলছে সংসার। কেউ নিজের ছেলে সন্তানকে সাথে নিয়েও সংগ্রহ করছে আগাছা। আগাছা কৃষকের জন্য অপকারী হলে ওদের কাছে ধরা দিয়েছে জীবিকার পথ হিসেবে।
সরজমিনে জলছত্র বাজারে গিয়ে জানা যায়, আগাছা ক্রয় বিক্রয়ের নানা কথা। আনারসের জন্য বিখ্যাত মধুপুর গড়। এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাকে করে আনারস পাঠানোর সময় নষ্টের হাত থেকে রক্ষার জন্য খড় দেয়া হতো। এখন খড়ের দাম বেশি। খড়ের আনারস তেমন সতেজ থাকে না। তাই শটি পাতা ও আগাছা ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে পাইকার ব্যবসায়ীরা। ধীরে ধীরে বাড়ছে আগাছার চাহিদা। এখন আর খড় দিয়ে আনারস সাজাতে দেখা যায় না। বাজার কেন্দ্রিক ভ্যানওয়ালা কিছু উদ্যমী পরিশ্রমী লোক সকাল থেকে সারা দিন নানা ঝোঁপ ঝাড় বন ও আনারস, কলা বাগানের আশপাশ থেকে এসব আগাছা কেটে এনে বিক্রি করে থাকে। ব্যবসায়ীরা খড়ের পরিবর্তে এসব ঘাস আগাছা কিনে আনারস মুড়ানোর কাজ করে ট্রাকে তুলে থাকে।
কেউ অর্ডার না দিলেও এসব আগাছা বিক্রেতারা বাজারে নিয়ে আসে। যার যার প্রয়োজন মতো কিনে নেন। একজন আগাছা বিক্রেতা দিনে দুই তিন ভ্যান আগাছা তুলে এনে বিক্রি করতে পারে। প্রতি ভ্যান আগাছা তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। সারা বছর বিক্রি হলেও জৈষ্ঠ্য মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত বেশি চাহিদা থাকে। কারণ ঐ সময় বাজারে আনারসের মৌসুম চলে।
আগাছা বিক্রেতা হেকমত আলী জানান, সে জৈষ্ঠ্য মাসে থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত আগাছা বিক্রি করে থাকে। সে প্রতিভ্যান ৩শ’ থেকে সাড়ে চারশ’ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এ কাজে তার সন্তানও সহযোগিতা করেছে। আগাছা বিক্রি করে উপার্জিত টাকায় এই কয়েক মাস চলে তার সংসার। আনারস মৌসুমের সময় হাজার বারশ’ টাকা উপার্জন করতে পারে বলে জানান। আব্দুল লতিফ জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠে তার বাড়ির আশপাশ তেকে জগত বেড় নামক আগাছা টেনে তুলে বাজারে নিয়ে তিন থেকে চারশ’ টাকা নগদ দামে বিক্রি করে বলে জানান। ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম জানান, জগত বেড় আগাছা দিয়ে আনারস ট্রাকে লোড দিয়ে মোকামে পাঠালে সহজে নষ্ট হয় না। সতেজ থাকে আনারস। এজন্য জলছত্র বাজারের সব পাইকার আগাছা দিয়ে আনারস ট্রাকে লোড দিয়ে থাকে। খড়ের চেয়ে আগাছা অনেকটা ভালো বলে তিনি জানান।
কুলি শ্রমিকরা জানান, খড়ের চেয়ে আগাছা দিয়ে আনারস ভরা অনেক আরাম আয়েশ। আগাছায় কোন ময়লা থাকে না। সবুজ আগাছায় আনারস সতেজ থাকে। মোকামে পৌছানোরও রঙ কোন রকম ঘোলাটে হয় না। আনারস ক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, খড় দিয়ে আনারস পাঠানোর চেয়ে আগাছা দিয়ে পাঠানো অনেক ভালো। ঘাস দিয়ে আনারস পাঠালে কম ক্ষতি হয়, আনারস ভালো থাকে। ভালো দামে বিক্রি করা যায়। দেখতে ভালো থাকে।