নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের এনজিও সেতুর সহকারি হিসাবরক্ষকে মেরে ফেলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ওই এনজিওর পাঁচ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের শনিবার সন্ধ্যায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। নিহত ওই হিসাব রক্ষকের নাম হাসান আলী(২৩)। সে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার পুঠিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে।
হাসান আলী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোস্যাল আ্যাডভাসমেন্ট থ্রু ইউনিটির (সেতু) জামালপুর জেলার পিয়ারপুর শাখার সহকারি হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। সেতু কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ওই শাখায় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক ও সহকারি হিসাব রক্ষক তিনজনে যোগসাজশ করে সংস্থাটির প্রায় ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব ঘটনায় ওই তিনজনকেই ক্লোজ করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সেতুর প্রধান কার্যালয় টাঙ্গাইলে নিয়ে আসা হয়। তাদের অর্থ আত্মসাতের বিষয় নিয়ে সংস্থাটির উর্ধতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আঞ্চলিক ব্যবস্থাপককে ছেড়ে দিলেও ব্যবস্থাপক ও হিসাব রক্ষককে ৭ম তলার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর হাসানের মা বাবাকে সেতুর প্রধান শাখায় ডেকে আনা হয়। হাসানের মা বাবা সাতদিনের সময় নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। শুক্রবার গভীর রাতে টাঙ্গাইল শহরের সদর সড়কে অবস্থিত সেতুর প্রধান কার্যালয় সেতু টাওয়ারের পশ্চিম পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ সেতু কর্তৃপক্ষ হাসানকে কোনভাবে হত্যা করে লাশ নিচে ফেলে দিয়েছে। পরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। তবে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি শুক্রবার রাতে ৭তলা তলা থেকে লাফ দিয়ে হাসান আত্মহত্যা করেছে।
এঘটনায় নিহতের মা সুফিয়া বেগম বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামী করে শনিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর আগে শুক্রবার রাতেই পুলিশ সেতুর নির্বাহী পরিচালক মির্জা সাহাদত হোসেনের ছেলে ও সংস্থাটির উপপরিচালক (মানবসম্পদ) মির্জা সাকিব হোসেন, উপপরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম ও মোঃ শরিফুল ইসলাম, সাপোর্ট স্টাফ রাশেদুল ইসলাম ও কর্মসূচি ব্যবস্থাপক খায়রুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায নিয়ে আসে পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যায় নিহত হাসান আলীর মা সুফিয়া বেগম বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা সেতু’র পাঁচ কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। পরে পুলিশ এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ ওই পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
হাসানের বাবা লতিফ অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করছে। আমাকে শুক্রবার রাতে সেতু অফিস থেকে ফোন করে বলা হয়, আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আপনি আসেন। পরে থানা থেকে ফোন করে হাসানের মৃত্যুর খবর জানানো হয। সেতুর উপপরিচালক (প্রশাসন) বিমল চক্রবর্তী জানান, পিয়ারপুর শাখার ম্যানেজার ও সহকারি হিসাব রক্ষককে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শাখায় সংযুক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা টাকা আত্মাসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। অফিসের সাত তলায় তাদের থাকার জন্য একটি রুম দেওয়া হয়। সেখান থেকে লাফ দিয়ে হাসান শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমেদ বলেন, হাসানের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।