নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে গ্রামীণ অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসানের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। এ নিয়ে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন। তবে অভিযুক্তকে বাঁচাতে একটি চক্র মাঠে নেমেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর সাগরদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বাহার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি ইউএনওর বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরেন। তিনি ইউএনও ইরতিজা হাসানের বিরুদ্ধে অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি ছাড়াও টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এসব টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ থাকলেও ইরতিজা হাসান অন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নিজের পক্ষে রাখতে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এসব চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে লিখিত মুচলেকাও নেন ইউএনও।
১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ঘাটাইল উপজেলা গঠিত। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কাজের বিনিময়ে টাকা প্রকল্পে (কাবিটা) ৮ কোটি টাকা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে (কাবিখা) ৬৫০ টন চাল এবং ৬৫০ টন গম বরাদ্দ হয়। অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের আওতায় ৫ কোটি এবং টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পে দেড় কোটি টাকার বরাদ্দ আসে। অভিযোগ উঠেছে এসব প্রকল্পের ১৫-২০ শতাংশ টাকা সংশ্লিষ্ট দফতরকে উৎকোচ না দিলে বরাদ্দ অনুমোদন হয় না।
ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের আওতায় গৃহীত ওয়েজ প্রকল্পের নগদ টাকা ছাড়াও ২০ ভাগ সিম জমা দিতে হয়। এ টাকা জমা না দিলে বরাদ্দের টাকা ছাড় দেয়া হয় না।
সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য কদবানু বেগম বলেন, আমার একটি প্রকল্পে ২১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখান থেকে ইউএনওর কার্যালয়ের অফিস সহায়ক তারা মিয়া চার হাজার টাকা নিয়ে নেন।
একই ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ৪০ দিনের কর্মসূচির বরাদ্দের টাকা পরিশোধ করা হয় মূলত শ্রমিকের বিকাশ বা নগদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। এসব বরাদ্দ থেকে ২০ শতাংশ সিম বা টাকা ইউএনওর কার্যালয়ে জমা দিতে হয়।
শুধু প্রকল্প থেকেই নয়, ঘাটাইলের বিভিন্ন ইটের ভাটা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও নানা উপলক্ষে কোনো প্রকার রশিদ ছাড়া টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউএনও ইরতিজা হাসান ও জেলা প্রশাসক শরীফা হকের বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার তাদের দফতরে গেলেও তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।