মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

আলোচনায় ফ্যাসিবাদ: ট্রাম্পের হুমকি ও ভাষায় অন্ধকার অতীতের প্রতিধ্বনি

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১২৩ বার পড়া হয়েছে

প্রায় প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা একসময় না একসময় স্বৈরাচারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। তিনি এমন একমাত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট যাকে তার নিজের হাতে বেছে নেওয়া উপদেষ্টা ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের প্রধান স্টাফ জন কেলি সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, ‘ট্রাম্প ফ্যাসিবাদের সাধারণ সংজ্ঞার মধ্যে পড়েন’। এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তাকে ‘পুরোপুরি নীচ ব্যক্তি’, ‘নিম্নমানের ও খারাপ জেনারেল’ বলে পাল্টা আক্রমণ করেছেন। তবে প্রথমেই তিনি ফ্যাসিবাদের অভিযোগটি অস্বীকার করেননি। বরং দিন কয়েক পর এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি তা নাকচ করেছেন।

ফ্যাসিবাদের ভাষা ও ইতিহাসের ব্যবহার

প্রেসিডেন্টদের ক্ষমতার সীমা বৃদ্ধি ও কখনও কখনও এর অপব্যবহার নতুন কিছু নয়। তবে ট্রাম্প এমন একমাত্র নেতা যিনি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলতে চান এবং বিদেশে স্বৈরাচারী নেতাদের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। যদিও আগের প্রেসিডেন্টদের বিরুদ্ধেও স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাদের কোনও উপদেষ্টাই তাদেরকে ফ্যাসিস্ট বলে আখ্যায়িত করেননি।

ট্রাম্প নিজেকে ফ্যাসিস্ট বলে অভিহিত করেন না। বরং তার প্রতিপক্ষদের ফ্যাসিস্ট বলে অভিযুক্ত করেন। তবে তিনি সব সময় নিজেকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান এবং পুনরায় নির্বাচিত হলে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে শত্রুদের কারাগারে প্রেরণ এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া তিনি বেআইনিভাবে দেশে বসবাসরত লক্ষাধিক মানুষকে আটক বা বহিষ্কার করার পরিকল্পনা করেছেন।

বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর ইউএস ক্যাপিটলে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। ছবি: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট

২০২০ সালের নির্বাচনের পর তিনি নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালান এবং দাবি করেন যে সংবিধান বাতিল করে তাকে আবার ক্ষমতায় বসানো উচিত। যদিও তিনি তা করতে পারেননি। কিন্তু তার সমর্থকদের একটি বৃহৎ অংশকে এই ধারণায় বিশ্বাস করাতে পেরেছিলেন যে বাইডেনের জয় অবৈধ ছিল।

সমালোচকদের ভাষ্য ও ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের সমালোচকদের অনেকেই তাকে স্বৈরাচারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ১৩ জন সাবেক ট্রাম্প উপদেষ্টা জন কেলির মন্তব্য সমর্থন করে একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন যেখানে ট্রাম্পের ‘অপরিমেয় ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা’র বিষয়ে সতর্কতা জানানো হয়েছে। সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন মন্তব্য করেছেন, ‘ফ্যাসিজম একটি ব্যাপক আদর্শ’, এবং ‘ট্রাম্প কোনও আদর্শগত চিন্তায় সক্ষম নন’।

যদিও ট্রাম্পের সমর্থকেরা দাবি করেন যে, প্রথম মেয়াদে তিনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন না। দ্বিতীয় মেয়াদেও হবেন না। তবে তার ভাষা ও ক্রিয়াকলাপ ফ্যাসিজমের একটি প্রতিচ্ছবি বহন করে। যেমন, তিনি ২০১৫ সালে তার প্রথম নির্বাচনি প্রচারণার দিন মেক্সিকান অভিবাসীদের ধর্ষক বলে উল্লেখ করেন এবং মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তার পররাষ্ট্রনীতিও জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

ফ্যাসিজমের প্রতীক ও ইতিহাসের উল্লেখ

ট্রাম্প একবার বেনিতো মুসোলিনির একটি উক্তি পুনরায় টুইট করেছিলেন। এনবিসির চ্যাক টডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘কে এটি বলেছেন তাতে কী আসে যায়?’ এছাড়া তিনি সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের ভাষা ব্যবহার করে সাংবাদিকদের ‘জনগণের শত্রু’ বলে আখ্যায়িত করেন। এমনকি তার একাধিক সাবেক উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি হিটলারের ‘মাইন ক্যাম্ফ’ পড়েছেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হিটলার ও ফ্যাসিজমের প্রশংসা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে তিনি নিক ফুয়েন্তেস নামক একজন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী এবং কানি ওয়েস্টের সঙ্গে ডিনারে অংশ নেন। কানি ওয়েস্ট পরে ‘হিটলারকে আমি পছন্দ করি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

বর্তমান যুগের স্বৈরাচারী নেতাদের প্রতি সমর্থন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনসহ অন্যান্য নেতাদের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ব্রিটেনের থেরেসা মে, কানাডার জাস্টিন ট্রুডো এবং ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মতো গণতান্ত্রিক নেতাদের তিরস্কার করেছেন।


(বাম থেকে ডানে) কিম জং উন, ভ্লাদিমির পুতিন ও শিজিন পিং। ছবি: রয়টার্স

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ বা জাতীয় নিরাপত্তার হুমকির সময়ে গণতন্ত্রের সীমা বৃদ্ধি করেছেন, তবে ট্রাম্প ছিলেন ব্যতিক্রমী। তিনি একবার বলেন, আমার কাছে সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ আছে, যেখানে আমি যেটা চাই তা করতে পারি।

ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম মেয়াদে বেশ কিছু অবৈধ বা অস্বাভাবিক পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করেছিল। যেমন, অভিবাসীদের ওপর ‘হিট রে’ ব্যবহার করা বা সীমান্তে খাল খুঁড়ে তাতে কুমির ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা। এছাড়া তিনি ২০২০ সালে বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।

পুনরায় ক্ষমতায় এলে সম্ভাব্য হুমকি

সমালোচকরা মনে করেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। তার মন্ত্রিপরিষদে সাধারণত অতি-দক্ষদের পরিবর্তে চরমপন্থি পরামর্শদাতারা থাকবেন, যারা তার দুর্নীতির প্রতিরোধ করবেন না। এর ফলে গণতন্ত্রের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।

সমসাময়িক ঘটনাবলির আলোকে ট্রাম্পের মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড ফ্যাসিজমের এক বিপজ্জনক প্রতিচ্ছবি উপস্থাপন করছে। যা গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি হতে পারে। তার হুমকি ও ভাষা আমেরিকার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে এক অন্ধকার পথে নিয়ে যেতে পারে।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights