মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

শিরোনাম :
টাংগাইলে সব ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে সম্প্রীতি র‌্যালি টাংগাইলে বাজার ব্যবস্থা তদারকি করছে পুলিশ প্রশাসন কালিহাতীতে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল মজুদ করায় জরিমানা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হবে থাকবে– হযরত আলী মিঞা আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে টাংগাইলে মশাল মিছিল গোপালপুরে সার্ভেয়ারের উপর হামলা টাংগাইলে সরকারের খাদ্য কর্মসূচির চাল ‘কালোবাজারে বিক্রি’র অভিযোগ সখীপুরে বনের জমি দখলের অভিযোগে জামায়াত নেতা গ্রেফতার ভূঞাপুরে বালু উত্তোলন বন্ধে অবরোধ তারেক রহমান ও সালাম পিন্টুসহ নেতৃবৃন্দ খালাস পাওয়ায় মির্জাপুরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

ঘাটাইলের আরিফ বুলেটে ঝাঁজরা শরীর নিয়ে লড়ছেন

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মো. আরিফ হোসেন (২১)। মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের ছোড়া বুলেটে ঝাঁজরা পুরো শরীর। প্রায় ২ মাস চিকিৎসা নিচ্ছেন ঘাটাইলের আরিফ। স্থানীয় ধলাপাড়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছেন তিনি। হত-দরিদ্র ঘরের সন্তান তিনি। বৈষম্যের শিকল ভাঙতে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। উপজেলার শালিয়াবহ গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের পুত্র আরিফ হোসেন। জুলাই অভ্যুত্থানের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি।

১৯শে জুলাই ঢাকার উত্তরা বোনের বাসায় বেড়াতে যান আরিফ। ২০শে জুলাই বিকালবেলা চা খাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। এমন সময় দেখেন উত্তরা ৭নং সেক্টরের বিভিন্ন সড়ক দিয়ে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে। তখন সন্ধ্যা ৭টা। আরিফ হোসেন বসে না থেকে সংযুক্ত হন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিছিলে কিছু পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। এমন সময় পুলিশের তিনটা গাড়ি আসে। ওই গাড়ি থেকে ভারী অস্ত্রে মুহুর্মুহ গুলি ছুড়ে পুলিশ। তাদের ছোড়া গুলি পিঠবিদ্ধ হয়ে আমার বুকের পাঁজর ও ডানা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সড়কে লুটে পড়ি আমি। তখনো আমার জ্ঞান আছে। পরে আমার সহযোদ্ধা বন্ধুরা প্রথমে উত্তরাস্থ ঢাকা স্পেশালাইজড হসপিটালে নিয়ে যায়।

সেখান থেকে রাত ১২টার পর নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রথমে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। বুলেটের ছোড়া গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়ায় প্রথমে তার খাদ্যনালিতে ৭ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে বুকের বাঁ-পাশে পাঁজরে ইনফেকশন দেখা দেয়। এতে দ্বিতীয় দফায় তাকে আরও একটি অপারেশন করা হয়। দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরইমধ্যে ফুসফুসে পচন ধরে যায়। ফলে ৩য় দফায় অস্ত্রোপচার করে তার ফুসফুস কেটে ফেলা হয়। এভাবে দীর্ঘ প্রায় ২ মাসের অধিক সময় চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। এতে তার নিজের পকেট থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এরমধ্যে ১৪ই আগস্ট থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি খরচে চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছেন তিনি। আরিফ দুঃখ করে বলেন, চিকিৎসার সময়ে ঢাকা মেডিকেলে আমার পরিবারের লোকজন ছাড়া আমাকে কেউ দেখতে আসেননি। ২১শে জুলাই থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ছিলেন। একটু উন্নতি হলে নিজ বাড়ি ঘাটাইলের শালিয়াবহ গ্রামে আসেন তিনি। এক রাত যেতে না যেতেই পেটে গ্যাস জমে তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। পরে ১১ই সেপ্টেম্বর অ্যাম্বুলেন্সে করে পুনরায় নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি বাড়িতে থাকলেও মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। ডাক্তার বলেছে, শঙ্কামুক্ত নন তিনি। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। আরিফের মা বলেন, আমার নাড়ি ছেড়া ধন সন্তানটি নিয়ে নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছি আমরা। দু’বলা আহার জোগার করাই আমাদের জন্য যেখানে ভীষণ কষ্ট, সেখানে চিকিৎসার খরচ জোগার করবো কীভাবে। সারা রাত ঘুমাতে পারি না। ছেলেটার বাবা নেই। আমার বয়স হয়েছে। চোখেও কম দেখি। ছেলের চিন্তায় আমিও অসুস্থ। এভাবে চলতে থাকলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে মরে যেতে হবে।

আরিফ হোসেন অশ্রুসজল কণ্ঠে বলেন, আমার পরিবারে মা, নানী, স্ত্রী, সন্তান ও এক ভাই নিয়ে ৬ জনের সংসার। বাঁচা-মরার সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনোমতে বেঁচে থাকলেও এই দরিদ্র সংসার চলবে কীভাবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার জীবনে যেন নেমে এসেছে চরম বিপর্যয় আর অন্ধকারের অমানিশা। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। বাবা মারা যাওয়ার পর টিউশনি করে, মানুষের দ্বারে দ্বারে কাজ করে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসার চালাতাম। এখন কীভাবে চালাবো সংসার। সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের সুদৃষ্টি ছাড়া আর যেন কোনো গত্যন্তর নেই আমাদের। ভীষণ কষ্টে আছি। তিনি বলেন, আমি তো মরেই যাবো। কিন্তু মরে গেলেও তো শান্তি নিয়ে মরতে পারছি না। বৃদ্ধ মা, সন্তান, স্ত্রী, ছোট ভাই ও বৃদ্ধা নানিটাকে কার কাছে রেখে যাবো। বড় স্বাদ জাগে, মরার আগে যদি আমার পরিবারের একটা মাথাগোঁজার ঠাঁই দেখে যেতে পারতাম তাহলে শান্তি নিয়ে মরতে পারতাম। কথাগুলো বলে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন হতভাগা আরিফ।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights