নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহ সোমবার (১১ নভেম্বর) সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি আদালতকে বলেছেন, গ্রেপ্তার দুই আসামির ও তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দি এবং অন্যান্য আলামত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়, সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার ভাইদের পরিকল্পনা ও নির্দেশে এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার সাক্ষ্য পর্ব শেষ হলো। টাঙ্গাইলের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান জানান, এরপর বাদী ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তি-তর্কের পর মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা এবং তার তিন ভাই এ মামলার অন্যতম আসামি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহ বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহমুদুল হাসানের আদালতে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। পরে আধাঘণ্টা বিরতি দিয়ে আবার ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সাক্ষ্যদানকালে তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্তে বিভিন্ন উৎস থেকে জানতে পারেন, এ হত্যার সঙ্গে শহরের কলেজপাড়ার আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা, মোহাম্মদ আলী জড়িত থাকতে পারেন। তাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে এ হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। পরে তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান, তার ভাই পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার পরিকল্পনা ও নির্দেশে এ হত্যা সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আব্দুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতেও হত্যার বর্ণনা উঠে আসে।
মামলার তদন্তের শেষ পর্যায়ে অশোক কুমার সিংহ পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়ে যান। তখন গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আমানুর রহমান খান ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। বাদী পক্ষের অভিযোগ, মামলার ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনেক আগেই শেষ হয়। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ এলেই কারাগারে থাকা আসামিরা অসুস্থতাসহ নানা অজুহাতে আদালতে আসতেন না। তাদের সময় ক্ষেপণের কারণে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছিল।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।