মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রায় দুইশ বছরের পুরনো দিপাবলী কালি মন্দিরের ৪টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা মন্দিরের কালি, মহাদেব, ডাকিনী ও যোগিনী প্রতিমার মাথা ভেঙ্গে চার স্থানে ফেলে রাখে। গত শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের দুরপাসা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জাপুর সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বরত সেনা সদস্য, পুলিশসহ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা মন্দিরটি পরিদর্শন করেছেন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে ভাঙ্গা প্রতিমাগুলি বিসর্জন দেয় মন্দির কমিটি এবং এলাকার সনাতনীরা।
জানা গেছে, প্রায় দুইশ বছর আগে উপজেলার দুরপাসা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সার্বজনীন দিপাবলী কালি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের আশপাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনেরও বসবাস রয়েছে। আশপাশের বাড়ির মুসলমানদের সার্বিক সহযোগিতায় মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মন্দিরটিতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গত শুক্রবার ভোর রাতে দুর্বৃত্তরা মন্দিরে হামলা চালিয়ে চারটি প্রতিমার মাথা ভেঙ্গে নেয়। ভেঙ্গে নেয়া কালি প্রতিমার মাথা মন্দিরের পাশের হরেন বৈরাগীর বাড়িতে টিউবওয়েলের পাশে, মহাদেবের মাথা অধীর রঞ্জন আচার্জ্যরে বাড়ির শীতলা মন্দিরের সামনে, ডাকিনী প্রতিমার মাথা দিপাবলী কালি মন্দির ঘরের চালে এবং যোগিনী প্রতিমার মাথা মন্দির ঘরের সামনে ফেলে রাখে। শনিবার সকালে অধীর এবং হরেন বৈরাগীর বাড়ির লোকজন বাড়িতে ভাঙ্গা মাথা দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয় এবং মন্দিরে যান। সেখানে গিয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে আশপাশের বাড়ির লোকজন এসে প্রশাসনকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মির্জাপুর সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বরত সেনা সদস্য, পুলিশসহ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা মন্দিরটি পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া সেনা সদস্যরা ওই গ্রামে টহলে রয়েছেন বলে জানা গেছে। দুরপাসা গ্রামের মোকাদ্দছ মাস্টার জানান, ভোর রাতে শব্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু কুকুর ভেবে তিনি এগিয়ে যাননি। পাশাপাশি বসবাস হওয়ায় আমাদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ নেই। মন্দিরের পাশের বাড়ির অধীর রঞ্জন আচার্জ্যর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার মন্দিরেও হামলা হতো। তালা থাকায় আমার মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করতে না পারলেও মহাদেবের ভাঙ্গা মাথা মন্দিরের সামনের রেখে গেছে। মন্দির কমিটির সভাপতি চান মোহন সরকার জানান, প্রশাাসনের লোকজন মন্দির পরিদর্শন করেছেন। প্রশাসনের পরামর্শে সকাল সাড়ে দশটার দিকে ভাঙ্গা প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। মুর্তি ভাঙার ঘটনায থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। এ বিষয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কাজ করছে বলে তিনি জানান। মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। জড়িতদের খোঁজে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা কাজ করছেন বলে তিনি জানান।