ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কালসাপ ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে আন্দোলন দমনে মধুপুরের সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা ইউএনও এখনো মধুপুরে বহাল তবিয়তে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলন দমনে তার নির্দেশেই পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে, টিয়ারশেল ও ২২৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। সে বুলেটে খাইরুল ইসলাম নামের একজনের এক চোখ অন্ধ হয়(চোখ খুলে বের হয়ে এসেছিল)।
আহত হয় অনেকজন। হাসপাতালে হামলার ভয়ে চিকিৎসা নিতেও ভয় পায় অনেকে। হাসিনা পালানোর পরে অনেকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মধুপুর। এতদিন ইউএনও পুলিশকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করার নির্দেশের বিষয়টি অস্বীকার করলেও অবশেষে প্রমাণ পাওয়া গেছে নির্দেশদাতা তিনিই।
আওয়ামী নেতাদের সাথে তার ছিল গভীর সম্পর্ক। আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন মধুপুরের ইউএনও মির্জা জুবায়ের। এই বিষয়টি তার এলাকা ফুলবাড়িয়ার অনেকে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও মধুপুরের এমপি সাবেক কৃষি মন্ত্রীর ও আস্থাভাজন ছিল ইউএনও জুবায়ের। এই ইউএনও গত উপজেলা নির্বাচনে সাবেক কৃষি মন্ত্রীর নির্দেশে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী খ. সামছুল আরেফিন শরীফ কে পরাজিত করার জন্য ফলাফল ঘোষণার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে ফলাফল পালটে দিয়ে সজীব আহমেদ কে বিজয়ী করেছিল।
তারই ধারাবাহিকতায় মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য শুরু থেকেই ইউএনও উঠে পরে লাগেন। শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মধুপুরের আন্দোলনের সূচনা হওয়ায় ইউএনও শহীদ স্মৃতির শিক্ষার্থীদের কালসাপ বলে গালি দেন এবং শিক্ষকদের সবার সামনে ভৎসনা করেন। এছাড়া শহীদ স্মৃতি থেকে যারা আন্দোলনে যাবে তাদের নাম, ঠিকানা, রোল নাম্বার লিস্ট করে ইউএনও কে দেয়ার জন্য সহকারী প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক কেন্দ্রীয় কর্মসূচি দেয়াল লিখন বা গ্রাফিতি আকার সময় শিক্ষার্থীদের নাম ঠিকানা, রোল নাম্বার কালেক্ট করা হয়েছিল।
এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে চাপ প্রয়োগ করেন। তাও যখন আন্দোলন দমানো যাচ্ছিলো না তখন ১আগষ্ট তিনি ‘মধুপুরে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভা ডেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী বলে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ওয়ার্ডভিত্তিক সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে উপজেলা পরিষদে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন। উক্ত মিটিং তার সভাপতিত্বে হয় এবং প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী উপস্থিত ছিলেন। ওই সময়(১ আগস্ট) শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি পেইজ থেকে বিষটি নিয়ে পোস্ট করা হয়েছিল এবং মিটিং এর বিষটি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে তার বাসার সামনের দেয়ালে ‘আমরা সবাই কালসাপের দল’ লিখে রেখেছে ৫ আগস্টের পর।