মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী কাজল দেবনাথের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সহপাঠীদের মাঝে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ। এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা টাঙ্গাইল সদর থানায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (১০ মে) সন্ধ্যায় শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডের ‘কোলকাতা কাচ্চি বিরিয়ানি হাউজে’।
ভুক্তভোগী ও সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থী কাজল দেবনাথ তার বন্ধুকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গেলে তিনজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসেন। কাজল তাদের বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসার জবাব দিলে একজন তার মুখে চড়-থাপ্পড় মেরে চলে যান মটরসাইকেলে করেন। এ ঘটনার সময় ছবি তুলে রাখা হয়। কিছু সময় পর তারা ফিরে এসে ছবিগুলো ডিলেট করতে বলে কাজলকে হুমকি দেন। এরপর তারা মোটরসাইকেলের চাবি ও কাচের বোতল দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে কাজল গুরুতর আহত হন। আশপাশের লোকজন ছুঁটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গুম, খুনসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন। ঘটনার পর কাজল দেবনাথকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা নিয়ে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে কাজল উল্লেখ করেন, তিনি প্রাণনাশের হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তার দাবি, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সাক্ষী রয়েছেন। যারা প্রয়োজনে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করতে পারবেন। কাজল বলেন, ওদের কারো সাথে আমার পূর্ব পরিচয় নেই। ধারণা করছি হাত ধোয়ার সময় পানির ছিটা বা শরীরে হাল্কা ধাক্কা লাগতে পারে। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি তাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর থানায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ক্যাম্পাস থেকে একাধিক বাসে করে শিক্ষার্থীরা থানায় উপস্থিত হন। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে থানা চত্বর। টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মেদ বলেন, ‘অভিযোগপত্র আমার কাছে আছে। তদন্ত হচ্ছে, তারা মামলা করলে রেকর্ড হবে। এখন বিষয় হচ্ছে, সমাধান কীভাবে চান। মামলা নিয়ে করতে চান, নাকি বসে সমাধান করতে চান, তা ঠিক করতে হবে। এছাড়া কোনো অপশন নেই।’
এদিকে রাতভর বিক্ষোভের পর ভোর ৫ টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও থানায় কর্তব্যরত পুলিশ ও জেলা পুলিশের সহায়তায় মুচলেকা (ভবিষ্যতে এরকম কাজের পুনরাবৃত্তি করবে না মর্মে) ও ক্ষমা চেয়ে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত করা হলে তাদের থানায় ডেকে এনে মুচলেকা নেওয়া হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। মুচলেকার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা হলেন মো. মাহিম খান (২২), পিতা: মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকানা: পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়া, টাঙ্গাইল সদর। জিহাদ ইসলাম শুভ (২২), পিতা: মো. শামিম, স্থায়ী ঠিকানা: জামুকি, মির্জাপুর উপজেলা; বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল সদরের পূর্ব আদালত পাড়ায় বসবাস করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জিহাদ ইসলাম শুভর প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও ছাত্রদলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। তার প্রোফাইলে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচির ছবিও পাওয়া গেছে। যদিও মাহিম খানের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য মেলেনি, তবে জানা গেছে তিনি জিহাদ ইসলাম শুভর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।