মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:০৭ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
মধুপুরে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা অভিযোগে সৎপিতার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন মধুপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্নেল আজাদের মতবিনিময় মধুপুরে অ্যাড. মোহাম্মদ আলীর মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা   মধুপুরে খাদ্য সংকটে গারো জনপদে বানরের উপদ্রব দিন দিন বাড়ছে মধুপুর ফল্টে ভূমিকম্পে কোটি মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা মধুপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই আরোহীর মৃত্যু মধুপুরে এক প্রতারক গ্রেফতার টাংগাইলের ৪টি আসনে বিএনপির হ-য-ব-র-ল অবস্থা!!! মধুপুরে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক এসোসিয়েশনের মানববন্ধন মধুপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া–পালটা ধাওয়া ও ভাঙচুর

দেখতে দেখতে ২৯ বছর কেটে গেল টাংগাইলের ভয়াভহ টর্নেডোর

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
  • ২০৭ বার পড়া হয়েছে
ফাইল ছবি

দেখতে দেখতে কেটে গেল ২৯ বছর। তবু চোখের পলক ফেললে মনে হয় এই তো সেদিন। ১৯৯৬ সালের ১৩ মে বিকেলের ভয়ার্ত স্মৃতি ভেসে ওঠে মানসপটে। এত বছর পরও টাঙ্গাইলের মানুষ ভুলতে পারেনি ভয়াল ১৩ মের টর্নেডোর সেই তাণ্ডবের স্মৃতি।

এদিনটি টাঙ্গাইলবাসীর জন্য শোক ও আতঙ্কের দিন। সোয়া দুই যুগেও কাটেনি সেই আতঙ্ক। এখনো স্মৃতি রোমন্থন বা ঘুমের ঘোরে আতঙ্কে জেগে ওঠে জেলার ৫ উপজেলার মানুষ।২৯ বছর আগে ১৯৯৬ সালের এই দিনে মাত্র প্রায় পাঁচ মিনিট স্থায়ী টর্নেডোর ধ্বংসাত্মক তাণ্ডবলীলায় জেলার ৫২৩ জন নারী-পুরুষ নিহত ও ৩০ হাজার আহত হয়।
টর্নেডোর ছোবলে ৮৫ হাজার ঘরবাড়ি, ৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৭টি মসজিদ এবং ১৪টি মন্দির লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো আতঙ্কে শিউরে ওঠে স্থানীয় মানুষজন।

সেদিন বিকেলে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে জেলার গোপালপুর, কালিহাতী, বাসাইল, ঘাটাইল ও সখীপুর এ পাঁচটি উপজেলার ৪০টি গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। অনেকের ঘরের চালা উড়ে যাওয়ায় গোলার ধান ঝড়ে অদৃশ্য হতে দেখা যায়।

অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা, গবাদি পশু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অনেক নারী-পুরুষের পরনের কাপড় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। অনেককে সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন ক্ষতবিক্ষত দেহে বিভিন্নকৃষি জমি, জঙ্গল, পুকুর-ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও নলকূপের ওপরের অংশ দোতলা দালানের ছাদ পর্যন্ত উঠে যায়।জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ১৩ মে ছিল সোমবার।
বিকেল ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে আকস্মিকভাবে গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়াগ্রাম থেকে শুরু হওয়া প্রায় পাঁচ মিনিট স্থায়ী প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় (টর্নেডো) আলমনগর ইউনিয়ন হয়ে মির্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নুঠুরচর গ্রামে হানা দেয়। মাত্র দুই মিনিটের ছোবলে গোপালপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। নিহত হয় ১০৪ নারী-পুরুষ। এ ছাড়া চার হাজারেরও বেশি গ্রামবাসী আহত হয়। ঝড়ে ২০০ একর বোরো জমির পাকা ধান বিনষ্ট হয়ে যায়। ১০ হাজার গৃহপালিত পশু-পাখি মারা যায়। পরে টর্নেডো কালিহাতীতে হানা দেয়।

ওই দিনই বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কালিহাতী উপজেলার তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা রামপুর-কুকরাইল গ্রামে টর্নেডো আঘাত হানে। রামপুর ও কুকরাইল গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ওই দুই গ্রামের একই পরিবারের ৭ জনসহ ১০৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত এবং ৪ শতাধিক মানুষ আহত হয়। রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে গণকবরে একত্রে দাফন করা হয় ৭৭ জনের মরদেহ।

বাসাইলের মিরিকপুরে ধানকাটার মৌসুম থাকায় উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার ধান কাটা শ্রমিক সমবেত হয়েছিল এ অঞ্চলে। ঝড় থেকে রক্ষা পেতেমিরিকপুর-সৈদামপুরের ধানক্ষেতের আতঙ্কগ্রস্ত বহু শ্রমিক মিরিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিন বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসা স্বল্প সময়ের টর্নেডোর ছোবলে স্কুলভবনটি বিধ্বস্ত হওয়ায় তারা সেখানেই চাপা পড়ে মারা যায়। গ্রামের বহু লোক নিখোঁজ হয়। পরদিন তাদের মৃতদেহের খোঁজ মেলে পাশের নদী, পুকুর, খাল-বিল ও জলাশয়ে।

মৃত মানুষ, গবাদি পশু ও মাছের দুর্গন্ধে বাসাইলের বাতাস সেদিন ভারী হয়ে গিয়েছিল। মিরিকপুর ছাড়াও ওই উপজেলার বর্নীকিশোরী, হান্দুলিপাড়া, কলিয়া, কাউলজানী, খাটরা, ফুলকী, বাদিয়াজান, সুন্নাগ্রামের অংশবিশেষ মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হয়। বর্নীকিশোরী উত্তরপাড়ার এক পরিবারের মরদেহ প্রায় আধমাইল দূরের বিল থেকে উদ্ধার করা হয়। অনেক পরিবারের কেউই জীবিত ছিলনা।

বাসাইল উপজেলা হাসপাতালসহ পাশের হাসপাতালগুলো ছিন্নভিন্ন আহত লোকজনে ভরে গিয়েছিল। উপজেলায় টর্নেডো আক্রান্ত এলাকায় একাধিক গণকবর তৈরি করা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ে বাসাইল উপজেলার ১৭ গ্রামের ৫ হাজার পরিবারের প্রায়সাড়ে ২৫ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্তহয়। ৩ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৫-৬টি কাঁচাবাজার, প্রায় দুই হাজার গবাদিপশু, ১০ হাজারহাঁস-মুরগি, সাড়ে ৩০০ টিউবওয়েল ও ২৫ হাজারগাছ ক্ষতিগ্রস্তহয়।

সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ২৩৭ জনে দাঁড়ায়। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যাছিল আরও অনেক বেশি। আজও কালো মেঘের আনাগোনা দেখলে বাসাইলের মানুষের মনে ভেসে ওঠে মিরিকপুরের সেইঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কিত স্মৃতি।

টাঙ্গাইলের ৪০টি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেদিনের টর্নেডোর আঘাতে মারা যায় অসংখ্য গবাদি পশু, দুমড়ে-মুচড়ে যায় ঘরবাড়ি, বিরানভূমিতে পরিণত হয় ফসলের মাঠ। সেই ৫ মিনিটের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় (টর্নেডো) টাঙ্গাইল জেলার বৃহদাংশের সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। ওই সময় বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক সংগঠন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এগিয়ে আসেন। সেদিনের টর্নেডোর আঘাতে অনেকেই পঙ্গুত্বকে বরণ করে আজও বেঁচে আছেন।

টর্নেডোয় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্মরণে স্ব স্ব এলাকায় স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে প্রতিবছর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই দিনটিকে স্মরণ করে কালিহাতীর রামপুর-কুকরাইল গ্রামের স্বজন হারানো পরিবারগুলো প্রতিবছর কাঙালিভোজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। মসজিদে মসজিদে করা হয় বিশেষ মোনাজাত। এবারও দিনব্যাপী অনুরূপ আয়োজন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৩ মের ভয়ালচিত্র চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ক্ষতিগ্রস্তরা আজও সেই তাণ্ডবের কথা স্মরণ করে শিউরে উঠেন। টাঙ্গাইলে ইতিহাসে এ রকম দুর্যোগ আসেনি কোনো দিন। দিনটি শোকে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি বা ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়)
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102