সখিপুরের জাবিদ আল মামুন ত্বিন চাষে সফল

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা গ্রামের সফল ত্বিন চাষি জাবিদ আল মামুন। ২০১৮ সালে করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেন। বেকার জীবন পার করছিলেন, সেই সঙ্গে চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে ২০২০ সালে করোনার থাবা। ঘরে বসে দিন পার করছেন জাবিদ। ইউটিউব থেকে জানতে পান কুরআনে বর্ণিত ত্বিন ফল চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে।

করোনাকালে ঘরে বসে আছেন, বেকর বসে না থেকে কী করা যায় এমন ভাবনা যখন তার মাথায় ঘুরছে, তখন ত্বিন চাষ করা সম্ভব কিনা জানতে চেষ্টা করেন? এর পর তিনি খোঁজ নিতে থাকেন বাংলাদেশে কোথায় ত্বিন ফল চাষ হচ্ছে। পরে জানতে পারেন গাজীপুরে চাষ হচ্ছে ত্বিন।

এরপর ত্বীন ফলের বিষয়ে কর্মশালায় যোগদান করেন গাজীপুরের শ্রীপুরে। প্রশিক্ষণ শেষ করে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৬০০ চারা কিনে বাড়ির পাশে ৩৫ শতাংশ জমিতে রোপন করেন। প্রতিটি চারা কিনতে খরচ হয়েছে ৫২০ টাকা।

জাবিদের ত্বিন বাগানের ছোট বড় সব গাছেই ত্বীন ফল ধরেছে। অনেক গাছেই ত্বীন ফল পাকতে শুরু করছে। প্রথমবারের মতো ত্বিন গাছে ফল আসতে শুরু হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের। এই ফল চাষ করে উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।

জাবিদ আল মামুন জানান, প্রথমে কিছুটা শঙ্কায় ছিলাম। পরে কঠোর পরিশ্রম, নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শে সফল হয়েছি। দুই মাসের মধ্যে গাছে ফল আসতে শুরু করে। ৬ মাসের মধ্যে ফল বিক্রি শুরু করি। এ বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ত্বীন ফল পাকতে শুরু করে। প্রতি কেজি ত্বিন বিক্রি করা হয় ৮০০-১০০০ টাকা করে।

এ পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কেজি ত্বিন পেয়েছি। ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা পেয়েছি। আশা করছি এ বছর ৯ থেকে ১২ লাখ টাকার ত্বিন বিক্রি করতে পারবো।

এ বছর প্রতিটি থেকে ৩ থেকে ৪ কেজি ফল পাবেন বলে আশা করছেন। দ্বিতীয় বছরে প্রতিটি গাছে ফলন হবে ৭ থেকে ১০ কেজি ফল আসবে। তিন বছর পর থেকে এককেকটি গাছ থেকে পাওয়া যাবে ২০ থেকে ২৫ কেজি ত্বিন। টানা ৩৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে একটি ত্বিন গাছ। আকারে দেশীয় ডুমুর গুলোর চেয়ে বেশ বড় হয়। পাকলে বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়।

স্থানীয় আরেক যুবক নুর আলম জানান, জাবিদের পরামর্শ নিয়ে আমিও ১৮ শতাংশ জমিতে ২০০ ত্বীনের চারা রোপন করেছি। আমার গাছগুলোতে ফল এসেছে এবং পাকতে শুরু করছে। আশা করছি আমিও ত্বিন চাষ করে লাভবান হবো।

স্থানীয় আরেক কৃষক হাজী শহীদুল্লাহ বলেন, জাবিদ যখন ত্বিন ফলের বাগান করল। তখন আমার মনে আশা জাগে। পরে জাবিদের কাছে থেকে তিনটি ত্বিনের চারা বাড়িতে নিয়ে টবের মধ্যে রোপন করি। আমার গাছেও ফল এসেছে। আমি নিজেও ত্বিন ফলের চাষ করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিয়ন্তা বর্মন বলেন, মালটা, কলা, কুলসহ অন্যান্য ফসল ও ফল চাষের সাথে এ উপজেলায় ত্বিন চাষ নতুন যুক্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জাবিদকে ত্বিন ফল চাষে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তাকে দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন। আশা করছি সে ভালো ফলন পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap