ঘাটাইলে ৫০ বছরেও হয়নি সেতু কষ্টে ১০ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বংশাই নদে সেতু হয়নি। সেতু না হওয়ার কষ্টে রয়েছেন ১০ গ্রামের মানুষ। দুর্ভোগ সয়ে এলাকাবাসী বর্ষায় নৌকা আর শুস্ক মৌসুমে কাঠের সাঁকো দিয়ে এই নদ পারাপার  হচ্ছেন। সেতু না হওয়ার কারণে এলাকার রাস্তাসহ অন্য কোনো উন্নয়নও তেমন হয়নি। এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন পল্লী চিকিৎসক সেন্টু তালুকদার।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের গাংগাইর গ্রামের বাসিন্দা সেন্টু তালুকদার। বংশাই নদের তীর ঘেঁষেই তার বাড়ি। তার মতো হাজারো মানুষের দাবি ধলাপাড়া-গাংগাইর এলাকায় বংশাই নদে একটি পাকা সেতু নির্মাণ।

সোমবার (৪ এপ্রিল) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, বংশাই নদে খেয়া নৌকার পরিবর্তে একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। উঁচু-নিচু হওয়ায় বয়স্ক মানুষ, স্কুল- কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। নিরুপায় হয়ে মানুষ

ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছেন এই নদ। উপজেলার ধলাপাড়া ও দেওপাড়া ইউনিয়নের গাংগাইর, সড়াসাক, আমজানি, বাদে- আমজানি, গোলাবাড়ি, ধলাপাড়া, মলাজানি, জুগিয়াটেংগর, নয়ারহাট, বর্গাসহ ১০টি গ্রামের মানুষকে যাতায়াত করতে হয় বংশাই নদী পারাপার হয়ে।

অত্র এলাকার সড়াসাক গ্রামে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাংগাইর গ্রামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া ধলাপাড়া এলাকায় রয়েছে একটি বড় বাজার, একটি কলেজ, একটি মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয় ও একটি বালিকা বিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বংশাই নদী পার হয়েই লেখাপড়া করতে যেতে হয়। দেশ স্বাধীনের পর হতেই তারা বংশাই নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মানের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্থানে দাবী জানিয়ে

আসছেন। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন ব্রীজ নির্মান করে দেয়ার। কিন্তু  কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাদের দাবী অতি দ্রুত এখানে নির্মান করে দেয়া হোক একটি পাকা ব্রীজ। তাহলে তাদের দীর্ঘ সময়ের দুর্ভোগ দুর হবে।

গাংগাইর গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোশারফ হোসেন বলেন, বংশাই নদে সেতু না থাকায় গ্রামে পাকা সড়ক হয়নি । বর্ষা মৌসুমে খেয়া নৌকায় পারাপার হতে সময় লাগে প্রায় ২০ মিনিট। শিক্ষার্থীদের স্কুুল-কলেজে

যাতায়াত, ফসল পরিবহনসহ উপজেলা সদরে যেতে হয় এই নদী পার হয়ে। ভরা বর্ষায় খেয়া নৌকাডুবি এবং শুকনোয় কাঠের সাঁকো পার হতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একই গ্রামের নূরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বংশাই নদীতে সেতু নির্মিত হয় নাই। অথচ প্রতিদিন ১০ গ্রামের শত শত মানুষকে এই নদীর ওপর দিয়ে পারাপার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। আমি সরকারের কাছে এখানে দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।

খেয়া নৌকার মাঝি দুলাল মিয়া বলেন, প্রায় ২৫ বছর যাবৎ নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করছি। এ জন্য বছরে সবার কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকা এবং ধান নিয়ে থাকি। বর্ষা মৌসুমে খেয়া থাকলেও শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করি। তবে এখানে একটি সেতু হলে আমাদের কষ্ট অনেক লাঘব হবে এবং মানুষ উন্নত জীবনযাপন করতে পারবেন।

ধলাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এজহারুল ইসলাম মিঠু ভুঁইয়া বলেন, তিনি উপজেলা উন্নয়ন মিটিংয়ে অনেকবার দাবী তুলেছেন, ধলাপাড়া- গাংগাইর- কালিহাতী রাস্তায় বংশাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা জরুরী। বিষয়টি আমি স্থানীয় প্রশাসন ও এমপি মহোদয়কে অবগত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি হবে বলে আশা করি।

ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, সড়াসাক ও গাংগাইর গ্রামের বংশাই নদীতে ব্রীজের অভাবে স্থানীয়  জনগনের দুর্ভোগের কথা তিনি অবহিত আছেন। স্থানীয়  সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলে এখানে যাতে একটি পাকা ব্রীজ নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap