নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরসহ পাঁচ উপজেলার ছয় লক্ষাধিক গ্রাহক রাত-দিনে পাঁচ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। ফলে রোজায় তীব্র গরমে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। এদিকে সময়মতো জমিতে সেচ দিতে না পারায় ক্ষতির শঙ্কায় আছেন বোরোচাষিরা। এ ছাড়া শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় লোকসান গুনছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এতে বিদ্যুতের জন্য বাড়ছে মানুষের ক্ষোভ। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকেরা।
জানা গেছে, গোপালপুর, মধুপুর, ধনবাড়ী, ঘাটাইল ও ভূঞাপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ (পবিস)। এসব এলাকায় পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ চাহিদা থাকে ৯০ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যায় মাত্র ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট। রেশনিং করে বিদ্যুৎ পর্যায়ক্রমে সরবরাহ করায় কোনো কোনো ফিডারে ২ থেকে ৩ ঘণ্টার বেশি মেলে না। ফলে গ্রাম অন্ধকারে থাকে।
গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ সংকটে সেচের অভাবে থোড় ধরা বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্ধ থাকছে ক্ষুদ্র কারখানা।
গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের বাসিন্দা সুজন পারভেজ এবং হেমনগর ইউনিয়নে বাসিন্দা আব্দুল মোমেন বলেন, একদিকে অসহ্য গরম। তার মধ্যে লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। দিন-রাত মিলিয়ে তাঁরা দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেয়ে থাকেন। প্রতি রাতে তারাবিহ আদায়ে খুব কষ্ট হচ্ছে। ইফতারি ও সাহ্রির করতে হয় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায়। তাঁরা খুব দ্রুত এর সমাধান চান। তা না হলে বিদ্যুতের গ্রাহকেরা যেকোনো ধরনের কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
উপজেলার নন্দনপুর রাধারাণী পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসরিক জাহান বলেন, ‘আমাদের উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতাভুক্ত হলেও নিয়মিত বিদ্যুৎ পাই না। ফলে লেখাপড়া করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা এর সমাধান চাই।’
এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ গোপালপুর জোনাল ম্যানেজার মাজহারুল ইসলাম জানান, এ পাঁচ উপজেলায় বিদ্যুৎ আসে পিডিবির জামালপুর গ্রিড থেকে। দুই সপ্তাহ ধরে জামালপুরের ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ২১৫ মেগাওয়াটের জায়গায় ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জামালপুর ও শেরপুর জেলায় সরবরাহের পর টাঙ্গাইলে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহে আরপিসিএল গ্যাস সংকটের কারণে ৪৫০ মেগাওয়াটের স্থলে ১০ উৎপাদন করছে। ময়মনসিংহ পাওয়ার প্যাক অভারহলিংয়ে থাকায় ৯৫ মেগাওয়াটের পুরোটাই বন্ধ। ফলে নজিরবিহীন লোডশেডিং দেখা দিয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ মধুপুর জোনাল ম্যানেজার আবু মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, টানা দুই সপ্তাহের বিদ্যমান সংকটের সঙ্গে যোগ হয়েছে রমজানের বাড়তি চাহিদা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খারাপ। গত সোমবার সহস্রাধিক গ্রাহক মধুপুর পৌরশহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিস ঘেরাও দিয়ে ভাঙচুর করেছেন।
গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, ‘সংকট নিরসনে জামালপুরের পরিবর্তে টাঙ্গাইল গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হোক। পিসিবি এ জন্য ঘাটাইলের পাকুটিয়াতে গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করছে। কিন্তু নির্মাণের কচ্ছপ গতি আমাদের হতাশ করছে।’
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর (পবিস) জিএম আখতার হোসেন বলেন, ঘাটাইল গ্রিড সাবস্টেশন চালু হলে সংকট কেটে যাবে।
গোপালপুরসহ পাঁচ উপজেলার ছয় লক্ষাধিক গ্রাহক রাত-দিনে পাঁচ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। ফলে রোজা ও তীব্র গরমে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এদিকে সময়মতো জমিতে সেচ দিতে না পারায় ক্ষতির শঙ্কায় আছেন বোরোচাষিরা।
Leave a Reply