মধুপুরে চাহিাদার চেয়ে যোগান বেশি থাকায় সুপারি বাজারে ধস ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

আনোয়ার সাদাৎ ইমরানঃ চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি থাকায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে সুপারি বাজারে ধস নেমেছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। নতুন ও খুদে ব্যবসায়ীরা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পড়ে পুঁজির কিছু অংশ ঘরে তোলার চেষ্টার কারণে বড় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মহা বিপাকে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর হলো মধুপুর। উত্তর টাঙ্গাইলের পাঁচ উপজেলা এবং ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার চারটি উপজেলার ব্যবসায়ীদের পাইকারি মোকাম হলো মধুপুর। ওই এলাকার শত শত ব্যবসায়ী মধুপুর হাট ও বৃহৎ পাইকারি দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

তাই মধুপুরের ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্য মজুত করে স্থানীয় বাজারের চাহিদার সঙ্গে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের চাহিদা যুক্ত করেন। সুপারি ব্যবসার ক্ষেত্রে হিসাব করতে হয় আরও বড় করে। কারণ, প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী বছরে দুবার সুপারি পাওয়া যায়। তাই বাকি সময়ের চাহিদা পূরণের জন্য শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি মজুত রাখেন ব্যবসায়ীরা।

গেল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পান-সুপারির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ব্যবসায় লাভবান হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তা দেখে স্বল্প ও মাঝারি পুঁজির কিছু ব্যক্তি সুপারি কিনে ভিজিয়ে মজুত করেন। বর্তমানে এই সুপারির চাহিদা আগের তুলনায় অনেক কম। অপর দিকে রমজান মাসে পান-সুপারির ভোক্তা কম হওয়ায় চাহিদা আরও একধাপ নেমে এসেছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের সুপারির বাজারে আসতে শুরু করায় বিভিন্ন জলাশয়ে ভিজিয়ে রাখা সুপারির কদর কমতে শুরু করেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এক বস্তা সুপারি কিনে প্যাকেজিং করে সংরক্ষণ পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া জলাশয় পর্যন্ত আনা, সংরক্ষণ করা এবং বাজারজাত করা পর্যন্ত বস্তাপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ব্যয় হয়। সংরক্ষিত এই সুপারির বর্তমান দাম প্রতি বস্তা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সুপারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অল্প কিছু সুপারি কিনে মজুত করেছিলাম। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর পরামর্শে দেড় মাস আগে বিক্রি করে কোনোভাবে চালান ঘরে তুলেছি। লাভের আশায় রেখে দিলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হতো।’

সুপারি ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘চলতি মৌসুমে সুপারি নিয়ে মহা বিপদে আছি। মজুত করা সুপারি আর এক মাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে। আবার বিক্রি করলেও প্রতি বস্তায় হাজার টাকার ওপরে ক্ষতি হবে।’

সুপারির মহাজন মো. মহুর আলী বলেন, ‘সুপারি ব্যবসায় এত বড় ধস ভাবতেও পারিনি। বিশাল বিনিয়োগের ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা সুপারি ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কতিপয় আনাড়ি নতুন ব্যবসায়ীর কারণে। তাঁরা কেনার সময় বেশি দামে সুপারি কিনেছেন। এখন ক্ষতি দেখে যতটুকু পুঁজি পারা যায় ঘরে তুলতে গিয়ে বাজারে ধস নেমেছে।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন, সময় এবং প্রয়োজন না বুঝে পণ্য সংরক্ষণ করলে ব্যবসায় হুমকি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। তেমনি মধুপুরের নতুন-পুরোনো ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আসায় সুপারি বেশি মজুত করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। চাহিদার চেয়ে বাজারে জোগান বেশি হওয়ায় দরপতন ঘটেছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap