মির্জাপুরে সওজের জায়গা দখল করে ড্রেন নির্মানের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা দখল করে নালা (ড্রেন) নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে একটি কারখানার বিরুদ্ধে। কারখানাটির বর্জ্য কয়েক কিলোমিটার দূরে খালে ফেলতে এই নালা তৈরি করা হচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয়ে মহাসড়ক-ঘেঁষা বসতবাড়ি উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলার নালাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের কদিম ধল্যা এলাকায় অবস্থিত সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস লি. কর্তৃপক্ষ এই নির্মাণ করছে বলে জানা গেছে। সাদিয়া টেক্সটাইল মিলের নিযুক্ত নির্মাণশ্রমিকেরা কংক্রিটের পাইপ স্থাপন করে নালা নির্মাণের কাজ করছেন। এ সময় দুজন শ্রমিক জানান, তাঁরা ১২ দিন ধরে নির্মাণকাজ করছেন। সাদিয়া টেক্সটাইল মিলের তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ১০ থেকে ১২ দিন আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার কদিম ধল্যা হতে পাকুল্যা সেতু পর্যন্ত নালা নির্মাণকাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এতে করে একদিকে দখল হচ্ছে সরকারি জায়গা, অপর দিকে ক্ষতির মুখ পড়তে যাচ্ছে সাটিয়াচড়া এলাকার ৮ থেকে ১০টি বসতবাড়ি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই নালা তৈরির মাধ্যমে তরল বর্জ্য ফেলা হবে কারখানার প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে জনবসতি এলাকার পাকুল্যা খালে। খালটিতে বর্ষাকালে পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। তরল বর্জ্য ওখানে ফেলা হলে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।

অন্য দিকে সওজ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে নালাটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে কারখানার পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে কিছু লোককে সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয়ে মহাসড়ক-ঘেঁষা বসতবাড়ি উচ্ছেদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে ওই সব বসতবাড়ির লোকজন।

মহাসড়ক-ঘেঁষা সাটিয়াচড়া গ্রামের আব্দুল খালেক ও সোলাইমান মিয়া বলেন, ‘সাদিয়া টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণ করছে। নালাটি যেভাবে করা হচ্ছে, তাতে আমাদের বাড়ির ভেতর দিয়ে যাবে। মিল কর্তৃপক্ষ এখনো আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি। এ ছাড়া কারখানার বর্জ্য পানি পাকুল্যা খালে ফেলা হলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে।’

একই এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, ‘মিল কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ড্রেন নির্মাণ করছে। সরকারের অনুমতি নিয়ে এই নির্মাণ বলে আমাকে জানানো হয়েছে। বাড়িঘর ভেঙে ফেলার ভয়ও দেখায়। এতে আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’

নালা নির্মাণকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের সুপারভাইজার সাদ্দাম হোসেনের দাবি, সওজ, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। অনুমতিপত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, কাগজপত্র ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে রয়েছে।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল অফিসের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ছাড়পত্র রয়েছে। নালা নির্মাণে কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। তবে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ কারখানা কর্তৃপক্ষ করতে পারবে না বলে তিনি জানান।

সওজের মির্জাপুর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সাদিয়া টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু এখনো তার অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন ছাড়াই কাজ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

জামুর্কী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ডি এ মতিন বলেন, ‘নালা নির্মাণে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেয়েছে বলে আমি শুনেছি।’ কারখানার তরল বর্জ্য পাকুল্যা খালে ফেলা হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছু দেখাটা ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নয়।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গণির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ অনুমতি ছাড়া সওজের জমিতে নালা নির্মাণ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap