৭ মে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর গণহত্যা দিবস

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ৭ মে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনের পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায় মির্জাপুরের নিরীহ বাঙ্গালীর উপর। নিরীহ বাঙ্গালীর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মির্জাপুর হানাদার মুক্ত ও স্বাধীন হলেও সেদিনের ভয়াবহ দৃশ্যের কথা মনে করে আজও মির্জাপুরবাসী শিউরে উঠে।

সে দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকার হিতেশ চন্দ্র পুরকসহ অনেকেই জানান, বঙ্গবন্ধুর আহবানে মির্জাপুর গঠিত হয় সংগ্রাম পরিষদ। সাবেক এমপি প্রয়াত ব্যারিস্টার শওকত আলী খান, সাবেক এমপি ও বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের প্রশাসক এবং টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ কামাল বীর বিক্রম এবং সাবেক এমপি একাব্বর হোসেনের সংগ্রাম পরিষদের নের্তৃত্ব দেন। (৩ এপ্রিল) ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গোড়ান-সাটিচড়ায় প্রতিরোধ যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরাজিত হবার পর মির্জাপুর সদরে এসে ঘাঁটি করে। রাজাকার আলবদরদের সহযোগিতায় পাকিস্তান বাহিনী মির্জাপুর সদরের আন্ধরা সাহাপাড়া, কুতুববাজার, পুষ্টকামুরী, বাইমহাটি, সরিষাদাইর ও পালপাড়ায় ঢুকে অত্যাচার, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যা চালায়। শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরকে হত্যা করে বংশাই ও লৌহজং নদীতে নিক্ষেপ করে। ৭ মে যাদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল, তারা হলেন- মির্জাপুর গ্রামের কমলা সাহা, সুভাষ সাহা, মধু সাহা, সুধাম চন্দ্র সাহা, ঊমাচরন, ধীরেন নাথ সাহা, গদাচরন সাহা, কেরুশীল, রংলাল সাহা, নিতাই চন্দ্র, আন্ধরা গ্রামের গৌরগোপাল সাহা, গঙ্গাচরন, পদসাহা, কান্দু সাহা, সরিষাদাইর গ্রামের ভবেন্দ্র সাহা, রঞ্জিত সাহা, নিতাই সাহা, ভোলানাথ, গনেশ সাহা, দুর্গাপুর গ্রামের কানাই সাহা, রাখাল চন্দ্র সাহা, সুরেশ, ভবেশ মন্ডল, বাইমহাটি গ্রামের রঞ্জিত সাহা, নগীনা বাশফৈর, কান্ঠালিয়া গ্রামের জগদীশ বকসী, সাধু মালী, পুষ্টকামুরী গ্রামের ডাঃ রেবুতী মোহন, ফনিন্দ্র নাথ সাহা, মাজম আলী ও জয়নাল আবেদীন। নরঘাতকরা (৭ মে) উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রনদা প্রসাদ সাহা রায় বাহাদুর ও তার একমাত্র পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে রাজাকার আলবদর বাহিনী নারায়নগঞ্জের বাসা থেকে তাদের ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। হত্যা করা হয় জয়নাল সরকার এবং মাজম আলীকে।

১৯৭১ সালের (৭ মে) গণহত্যার নির্মমতার কথা ভুলতে পারেননি গোটা মির্জাপুরবাসী। সেদিনের স্মৃতি মনে করে মির্জাপুর গ্রামবাসি রনদা নাট মন্দিরে কীর্তন এবং আলোচনা সভার আয়োজন করে। এছাড়া কুমুদিনী পরিবার কুমুদিনী কমপ্লেক্সে প্রার্থনা সভা, কাঙ্গালী ভোজ, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসুচী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। দিবসটি সরকারীভাবে পালন, নিহতদের স্মরণে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মান এবং অসহায় পরিবারের দিকে সরকার সুনজর দিবেন এমনটাই প্রত্যাশা মির্জাপুরবাসী এবং কুমুদিনী পরিবারের।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাফিজুর বলেন, মির্জাপুরে গণহত্যার স্থানগুলো চিহিৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নের্তৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে স্মৃতি ফলক নির্মান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap