নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদুর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ফলদা ইউপি সচিব সামাউন কবীর জেলা প্রশাসকের কাছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সচিবকে মারধরও করা হয়েছে। তিনি থানায় মামলা করে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, চেয়ারম্যান রাজস্ব আয়-ব্যয়ের ভাউচার এককভাবে সমন্বয় করে নিয়মিত অর্থ আত্মসাৎ করেন। ৩০ হাজারের বেশি অফলাইন ভুয়া জন্ম সনদপত্র প্রদান করেছেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে টিআর খাতে নলকূপ স্থাপন প্রকল্পের কাজ না করেই এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদের আসবাব ক্রয় না করে দুই লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। এলজিএপি প্রকল্পে অনিয়ম, ভিজিডি কার্ডধারীদের কাছ থেকে পরিবহন খরচ গ্রহণ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধুবলিয়া মতিন মাস্টারের বাড়ি থেকে রহমান মাতাব্বরের বাড়ি পর্যন্ত সিসি ঢালাইকরণ প্রকল্পের দেড় লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্পের শ্রমিক নিয়োগ ও সিম কার্ড ক্রয়ে স্বজনপ্রীতি করেন। একই অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিলের সেলাই মেশিন ক্রয় বাবদ দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া রয়েছে আরো নানা অভিযোগ।
সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদু এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হন। এর আগেও তিনি একাধিকবার চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয়ভাবে তাঁদের পরিবারের রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান।
মারধরের শিকার ফলদা ইউপি সচিব সামাউন কবীর বলেন, ‘চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতির শেষ নেই। তাঁর এসব কাজে সহযোগিতা না করে প্রতিবাদ করেছি। গত ২৬ মে আমি রোজা ছিলাম। সেদিন চেয়ারম্যান পরিকল্পনা করে আমাকে লোক দিয়ে ডেকে নিয়ে তাঁর বাহিনী দিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। আমি প্রাণে বেঁচে যাই। পরদিন ২৭ মে ভূঞাপুর থানায় আমি বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি। এর আগেও দুই সচিব চেয়ারম্যানের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে ডিসি স্যারের কাছে একটি লিখিত আবেদন দিয়েছি। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা চলছে। ’
ভূঞাপুরের নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ফজলুল করিম বলেন, ‘আমি ফলদায় চাকরি করেছি। চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদু সুবিধাজনক ব্যক্তি নন। ’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদু বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি করি নাই। ইউপি সচিব জনগণকে সেবা না দিয়ে হয়রানি করেছেন। তাই পাবলিক ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে মারধর করেছে। এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি যেসব কাজ করেছি সচিবকে সঙ্গে নিয়েই করেছি। আমার বিরুদ্ধে সচিব ষড়যন্ত্র করছেন। ’
ভূঞাপুর থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইউপি সচিবের দায়েরকৃত মামলায় একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শুনেছি সচিবের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। ’
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, ‘ফলদার ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদুর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ
Leave a Reply