ধনবাড়ীতে সেতু ভাঙ্গায় দুর্ভোগে ২০ গ্রামবাসী

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর পাইস্কা ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামের বৈরান নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ভেঙে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ২০ গ্রামবাসী। এই অবস্থায় নৌকায় করে পারাপার হচ্ছেন দুই পাড়ের বাসিন্দারা। ওই স্থানে আবারও সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর না ঘুরতেই ভেঙে পড়েছে সেতুটি। নির্মাণে অনিয়ম করেছে প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বালুখেকোরা নির্মাণের পরপরই সেতুসংলগ্ন স্থান থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলতে শুরু করে। বালু তোলার ফলে প্রথমে সেতুর মাঝখানে দেবে যায়। ফলে নিচের গার্ডার ও পাটাতনে ফাটল ধরে। কিছুদিন পর থেকে ভাঙতে শুরু করে সেতুর রেলিং।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের শেষের দিকে নির্মাণকাজ শেষ হয়। কাজটি পায় স্থানীয় এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাতকুড়া গ্রামের বৈরান নদীর ওপর সম্প্রতি নির্মিত সেতুটি ভেঙে পড়েছে। হালকা পিলারে করা হয়েছিল লম্বা ও সরু সেতুটি। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পাড়ের বসতবাড়ি ও কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।

নদীর এ-পারে ভাতকুড়া আর ও-পারে দরিচন্দ্রবাড়ী দক্ষিণপাড়া গ্রাম। সেতুটি ভেঙে পড়ায় অন্তত ২০ গ্রামের বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মালামাল পারাপার করতে হচ্ছে ছোট নৌকায় করে। নৌকাতে যাওয়া-আসা করছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, কৃষক, কৃষাণি, কর্মজীবী, শ্রমজীবী ও বয়োবৃদ্ধরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজনু মিয়া, হান্নান মিয়া বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের সময় নিম্নমানের কাজ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। উপজেলার ইঞ্জিনিয়াররা বিষয়গুলো দেখেও এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু ওই ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি।’

ভাতকুড়া গ্রামের বাসিন্দা অতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘সেতুটি হওয়ার পরপরই বালুখেকোরা পিলারের পাশ থেকে অবাধে উত্তোলন শুরু করেন। বালু তোলার ফলে নদীর গভীরতা বেড়ে গেছে।’

অপর কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতবারের বর্ষায় সেতুটি ভেঙে পড়ে। দুই পারের যোগাযোগ সচল রাখতে এলাকাবাসী ডিঙি নৌকা কিনে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। আমাদের একটাই দাবি, সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার।’

নদীগর্ভে বাড়ির আঙিনা চলে যাওয়া ভুক্তভোগী শমছের আলী ও নেপাল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘প্রতিনিয়তই ভিটেবাড়ি ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে অনেকে সহায়সম্বলহীন হয়ে যাবে।’

স্কুলশিক্ষার্থী লিমন মিয়া, সাদ্দাম হোসেন ও হ্যাপি আক্তার বলেন, এলাকার শিক্ষার্থীরা সদরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। তাদের নৌকায় করে নদী পার হতে হয়। তাই দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।

এ বিষয়ে পাইস্কা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাবুল বলেন, ‘সেতু ভেঙে পড়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশ্বস্ত করেছেন নতুন সেতু নির্মাণের।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় (এলজিইডি) প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন সাগর বলেন ‘সেতুটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে এডিবিতে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এটি নির্মাণ করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap