ঘাটাইলে আপত্তির পরও স্কুল ঘেঁষে গড়ে উঠছে ধলেশ্বরী এগ্রো ফুড মিলস নামে একটি কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের আঠারোদানা গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে এবং একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ধলেশ্বরী এগ্রো ফুড মিলস নামে একটি স্বয়ংক্রিয় চালকল গড়ে উঠছে। এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে সাত গ্রামের ৪১৯ জন গণস্বাক্ষর করে গত বছরের ১১ অক্টোবর স্থানীয় ইউএনও ও পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টো মিল স্থাপনে ছাড়পত্র দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

চলতি বছরের ৭ জুন আবারও নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন এলাকাবাসী। এর পরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ এলাকাবাসীর।

স্থানীয়রা জানান, আঠারোদানা মৌজার তিন ফসলি জমির ওপর ধলেশ্বরী এগ্রো ফুড মিলস নির্মাণ করা হচ্ছে। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। এতে শুধু কৃষিজমিই নষ্ট হবে না, পরিবেশের জন্য হুমকি হবে কারখানাটি। নির্মাণাধীন কারখানার পাশে আঠারোদানা বাদেপাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শব্দ ও পরিবেশ দূষণে ব্যাহত হবে পাঠদান। এ কারণে আপত্তি জানান আঠারোদানা, বাদেপাশী, পাড়াগ্রাম, মিয়াপাড়া, মশাজান গোলামগাতি ও হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দারা।

লোকালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে এক কিলোমিটার বা এক হাজার ৯৮ গজের মধ্যে কলকারখানা স্থাপন করা যাবে না বলে জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০০-৫০০ গজের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় চালকলটি গড়ে উঠছে। এটি নির্মাণে গত ৯ যে পরিবশে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ছাড়পত্র নং ২২-৭৭১৭৬।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহসানউল্লাহ কবির। তার অভিভাবক আঠারোদানা গ্রামের আনোয়ারুল কবির সোহেল জানান, শিশুদের লেখাপড়ার জন্য নিরিবিলি পরিবেশ দরকার, যা মিলটি নির্মাণ হলে বিদ্যালয়ে আর থাকবে না। এই বিদ্যালয়ে ছেলেকে পড়াতে চান না তিনি ।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিয়ারের ভাষ্য, তার বাবা আজমত আলী ওই বিদ্যালয়ে তাকে আর পড়াবেন না। তার বাবা নাকি বলেছেন, কারখানা হলে ধুলা উড়বে, ছাই উড়বে, প্রচণ্ড শব্দ হবে। এর মধ্যে তারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। একই ধরনের কথা অন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

চালকলের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েই নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কিছুটা ক্ষতি হবে। যেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে, সেহেতু আমার কিছু করার নেই।’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, আপনি নাকি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মিল নির্মাণে কোনো প্রতিবাদ করেননি? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি টাকা নেওয়ার বিয়ষটি অস্বীকার করেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, লোকালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া ছাড়পত্র সম্পূর্ণ বেআইনি।

ঘাটাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি ইউএনওকে লিখিতভাবে জানানো হয়। ইউএনও পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানান। এর পর দুই-তিন দফায় বিষয়টির তদন্ত হয়। এতেও কাজ হচ্ছে না।

মিলটি স্থাপন করা হলে অবশ্যই পরিবেশ দূষণ হবে। ব্যাহত হবে পাঠদান, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকবে শিশু শিক্ষার্থীরা।

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কাগজপত্র ঢাকায় পাঠাই। সেখান থেকে অনুমোদন দেওয়া হলে টাঙ্গাইল থেকে শুধু ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালকই ভালো বলতে পারবেন।’

পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক জিয়াউল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঘাটাইলের ইউএনও মুনিয়া চৌধুরী বলেন, যেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র মিলেছে। তাই বলা যায়, সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই মিলটির নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap