নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বংশীনগর পশ্চিমপাড়া (কাইতলা হাটের পূর্ব পাশে) গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২০ বছরের তরুণী। ধর্ষণের পর মেয়েটি এখন ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই ঘটনায় অভিযুক্ত একই গ্রামের মৃত ফটু মিয়ার ছেলে জলিল মিয়া (৫৫)।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত জলিল মিয়ার পরিবারের সাথে ভুক্তভোগীর পরিবারের দীর্ঘদিন ধরেই ভাল সম্পর্ক চলে আসছে। সম্পর্কে জলিল মিয়া ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর দুঃসম্পর্কের নানা লাগে। দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল দুই পরিবারের মধ্যে মেলবন্ধন। নিয়মিত চলছিল আসা যাওয়া। অভাব অনটনের কারনে ভুক্তভোগীর পরিবার মাঝেমধ্যেই অভিযুক্ত জলিল মিয়ার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চলত।
বরাবরের মত চার মাস আগে অভিযুক্ত জলিল মিয়ার দোকানে একা কেনাকাটা করতে যায় ওই তরুণী। সেই সুযোগে মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে জলিল মিয়া ওই তরুণীকে একই বিল্ডিংয়ের উপরের ঘরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ঘটনাটি কারো কাছে বলে দিলে বাপ-ভাই ও পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় জলিল ও তার পরিবার। জলিল মিয়ার ধর্ষণের শিকারে এখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা, এমনটাই অভিযোগ ওই তরুণীর।
ঘটনাটি জানাজানি হলে সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা করলেও কোন সুরাহা হয়নি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তরুণীর বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান তরুণীর বড় ভাই।
কথা হয় একই এলাকার ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেনের সাথে। দেলোয়ার হোসেন জলিলের আপন ভায়রার ছেলে। দেলোয়ারকে বিয়ে করিয়ে তাদের উকিল বাবাও হয় এই জলিল মিয়া। একপর্যায়ে উকিল মেয়ের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয় জলিল।
দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, দু’জন সন্তান রেখে ছয় বছর আগে জলিল তার স্ত্রীকে নিয়ে উধাও হয়। সে সময় দেলোয়ার থানায় একটি ডায়েরিও করেন। জলিল এলাকায় ফিরলেও তার স্ত্রী এখনো নিরুদ্দেশ। জলিল কী তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে না মেরে ফেলেছে তাও জানেনা এই দেলোয়ার।
শোনা যায়, গেল কয়েক বছর আগেও জলিল দিনমজুরের কাজ করত। বাঁশ দিয়ে টালাইয়ের কাজ করে সংসার চালালেও রাতারাতি সে বিলাসবহুল বাড়ি ও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেল কিভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি এলাকাবাসীর।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ব্যাক্তি বলেন, জলিল তার টাকার গরমে মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা আরো বলেন, জলিল এর আগেও অনেক নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকলেও টাকার গরমে তা মীমাংসা করে ফেলে।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, অভিযুক্ত জলিল মিয়ার প্রতি স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারাও এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, এরকম ঘটনা যেন আর কেউ না ঘটাতে পারে।
এ বিষয়ে একাধিকবার জলিলের বাড়িতে গেলেও তার সাথে কথা বলা যায়নি। কৌশলে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটা মিথ্যে বানোয়াট। তাদের কাছে টাকা পাওনা থাকায় তা যেন না দিতে হয় এজন্য তারা এ পায়তারা চালাচ্ছে।
তবে জলিল সম্পর্কে তার মেয়ে কল্পনার সাথে কথা বললে সে নিউজ না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন এবং আইনে যা হবার তা হবে বলে জানান।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, জলিল মিয়া এখন পলাতক রয়েছেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার এর সঠিক বিচারের প্রত্যাশায় টাঙ্গাইল জজ কোর্টে মামলা করেছেন বলে জানান ওই তরুণীর বাবা।
ভুক্তভোগীর বাবা কান্নাকাটি করে সাংবাদিকদের বলেন, আমি গরীব, অসহায় একজন বাবা। আমি বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমার মেয়েকে মেডিকেলে পরীক্ষা করাই এবং নিশ্চিত হই। আমার মেয়ের বয়স ১৫ বছর হলেও ওই মেডিকেল পরীক্ষায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ২০ বছর উল্লেখ করেন। আমার মেয়ের বিয়ে হয়নি, তার আগেই এমন সর্বনাশ করল ওই জলিল। আমি বাবা হয়ে কেমনে এটা সহ্য করুম। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন দেওয়ান বলেন, আমার কাছে মেয়ের বাবা আসছিল। আমি বলেছি আপনারা আইনের সহযোগিতা নিন।
Leave a Reply