নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে এখন অনিয়মই যেন নিয়ম। সাবরেজিস্ট্রারের ফি লাখে ৫শ আর কথিত দলিল লেখক সমিতির নামে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা লেনদেনের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। চলছে ৯ সিন্ডিকেটের বাণিজ্য।
এ সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে কথিত দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বাতেন মিয়া, সহ-সভাপতি মীর মজিবর, সম্পাদক নাসির উদ্দিন, আফজাল হোসেন, আবু মিয়া, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবরেজিস্ট্রার কামরুজ্জামান কবীর, অফিস সহকারী রোকেয়া বেগম, টিসি মহোরার সুপ্রভা ও মহোরার খালেদা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেউ দলিল করতে গেলে লেখক ভেন্ডারের কাছে ব্যাংক চালানসহ সিন্ডিকেটের নির্ধারিত হারে সমিতির ফান্ডে চাঁদার টাকা জমা দিতে হয়। দলিল লেখার পর সমিতির নিযুক্ত ব্যক্তির কাছে ১ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দলিলের জন্য জমা দিতে হয় ১ হাজার টাকা। ৫ লাখ টাকার দলিলে ১৫শ টাকা। ১৫ লাখ টাকার দলিলে ২ হাজার টাকা। এর অধিক মূল্যের একটি দলিলে লেখক সমিতি অবৈধভাবে আরও আদায় করে থাকেন ৫ হাজার টাকা।
একইভাবে বায়নাপত্র রেজিস্ট্রি দলিলে ২ হাজার টাকা, শুধু পাওয়ার, বন্ধকী ও ব্যাংক পাওয়ার দলিলের ক্ষেত্রে দলিলপ্রতি ১ হাজার টাকা, ১ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকার একটি বণ্টননামা দলিলে ২ হাজার টাকা। আর তার অধিক মূল্যের একটি বণ্টননামা দলিলের জন্য লেখক সমিতিকে দিতে হয় ৫ হাজার টাকা।
এভাবে সমিতির নিযুক্ত ব্যক্তি নির্ধারিত অর্থ নিয়ে সরকারি নোটিশে একটি সাংকেতিক সিল দেন। কেরানি ওই সিল ছাড়া কোন দলিল জমা নেন না। একই সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রি ফির নামে নেয়া হয় লাখে ৫শ টাকা।
এছাড়া আমমোক্তার নামা দলিলে স্বচ্ছ কাগজপত্র থাকলেও অফিস সহকারী রোকেয়া বেগম অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। তার বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ উঠলেও কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছেন না।
রোকেয়া বেগম বলেন, নতুন মসজিদের জন্য কিছু টাকা আর এন ফিসের জন্য কিছু টাকা নেয়া হয়।
দলিল করতে আসেন কুশারিয়া গ্রামের আঃ জলিল। দলিল করতে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, আমি ৪ শতাংশ জায়গা দলিলের জন্য ১১ হাজার টাকা দিয়েছি। এখনো দলিল হয় নাই। আরো লাগবে কিনা পরে বলতে পারব।
একই সময় কথা হয় কালিহাতী থেকে আসা দুলাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর নামে ঘাটাইলের গাংগাইর গ্রামে তার শ্বশুরের ওয়ারিশান ১৬ শতাংশ সম্পত্তির দানপত্র দলিল করতে ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছি।
সব অভিযোগ স্বীকার করে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বাতেন মিয়া বলেন, এ টাকাগুলো মাস শেষে সব দলিল লেখকদের মাঝে ভাগ করে দেই।
টাকা নেয়ার পর সরকারি নোটিশে সাংকেতিক সিল দেয়া হয় কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়টা দলিল হয় তার হিসাব রাখার জন্য।
এবিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সম্পাদক নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে এই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবরেজিস্টার কামরুজ্জামান কবীর বলেন, দলিল লেখক সমিতি অতিরিক্ত টাকা নেয় আমি শুনেছি। এ বিষয়টি আমি উপর মহলে জানিয়েছি।
Leave a Reply