বিশেষ প্রতিনিধিঃ মধুপুরের আনারস দেশের বিখ্যাত আনারস হিসেবে পরিচিত। শুধু তাই নয় আনারসের জন্য মধুপুরকে আনারসের রাজধানী হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের উৎপাদিত আনারসের ৮০ শতাংশই মধুপুরে উৎপন্ন হয়ে থাকে বলে ধারনা করা হচ্ছে । আর এ কারনেই মধুপুরকে আনারসের রাজধানী বল হয়ে থাকে।
আনারস অত্যন্ত একটি রসালো এবং সুস্বাদু ফল। পুষ্টি-গুন সমৃদ্ধ বিশেষ উপকারী এই ফল। আনারস এক প্রকারের গুচ্ছফল। এর অন্যান্য নাম – Pineapple, Anannas, Ananus, Bahunetraphalam, Anamnasam। এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Ananas comosus (L.) Merr. এই ফলের আদি জন্মস্থল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। তবে বর্তমানে ক্রান্তীয় অঞ্চলে বিশ্বের সর্বত্রই এর চাষের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।
আনারস পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে, হাড় গঠনে,দাত ও মাড়ি সুরক্ষায়, চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়,হজম শক্তি বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাধায় সাহায্য করে।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় আনারসের চাষ হয়। এরমধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আনারসের সুনাম দেশজোড়া। উপজেলার অনরখোলা, আউশনাড়া, শোলাকুড়ি, ফুলবাগচালা, বেরিবাইদ, মহিষমাড়া, কুড়ালিয়া, কুড়াগাছা ইউনিয়নে আনারসের ব্যাপক চাষ হয়। এই এলাকায় উৎপাদিত আনারসের মধ্যে বর্তমানে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে জলডুগি জাতের ছোট ছোট মিষ্টি আনারস, এছাড়া বর্তমানে জায়ান্টকিউ আনারস চাষের দিকে ঝুকছেন কৃষকরা। প্রতিবছর বর্ষার সময়ে এমনকি সারাবছর দেশের বিভিন্ন বাজারে বড় বড় সাইজের যে আনারস দেখা যায় তার অধিকাংশই উৎপন্ন হয় মধুপুর এলাকায়।
টাংগাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় জলছত্র ও গারোবাজারে আনারসের হাট বসে সপ্তাহে দুইদিন। প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার এবং গারোবাজার প্রতি রবি ও বুধবার হাটের দিন। কিন্তু মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই আশেপাশের এলাকার চাষীরা নিজেদের জমিতে উৎপাদিত আনারস বিক্রির উদ্দেশ্যে হাটে এসে উপস্থিত হয়।
ভোর থেকেই আশে পাশের বাজার গুলুতে শুরু হয়ে যায় ক্রেতা বিক্রেতার সরব উপস্থিতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন। বিক্রেতারা আসেন নিকটবর্তী দশগ্রাম থেকে ঘোড়ার গাড়ি, সাইকেল, ভ্যান,রিক্সা,পিক আপে ভর্তি করে আনারস নিয়ে। গাছপাকা আনারসে উপচে পরে বাহন মুখভর্তি থাকে নির্মল হাসিতে,আনারসের সাথেই গেথে আছে স্বপ্ন। টাংগাইল-ময়মনসিংহ সড়কে জলছত্র বাজারে বসে আনারস কেনাবেচার এই উৎসব।
হাট চলাকালীন সময়ে ২৫ মাইলের মোড় থেকে পুলিশ ফাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত হয় পরিধি। যেদিকেই চোখ যায় আনারস আর আনারস, চারদিকে রাস্তার পাশে দোকানের কাছে স্তুপ আকারে রাখা আনারস। কৃষক সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসছে পরম যত্নে বছরধরে যত্ন করে ফলানো মধুপুরের এই সম্পদ স্বর্ণকুমারীকে। বড় বড় ট্রাকে-পিক আপ ভর্তি করা হচ্ছে আনারসে। আনারস ঘিরে এরকম বিশাল কর্মজজ্ঞ চলতে পারে এখানে না আসলে এবং স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা এক প্রকার অসম্ভব।
আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আনারস পাকার মৌসুম শুরু হয় তবে সারাবছর ই এখানে আনারসের বাজার লেগেই থাকে। মোটের বাজার, গারো বাজার, ২৫ মাইল বাজারে আনারসের বেচেকেনা হলেও জলছত্র বাজারেই হয় সবচেয়ে বড় হাট।
এই পাহাড়ী এলাকার কৃষির প্রধান চাষাবাদ হচ্ছে আনারস। সাথী ফসল হিসেবে আদা, কচু, হলুদ, পেঁপে আবার অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ করেন।
Leave a Reply