কোরবানির হাট কাঁপাবেন দেলদুয়ারের মানিক

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ উদ্যোক্তা হামিদা আক্তার স্বপ্ন দেখেন বড় খামারী হওয়ার। স্বপ্ন বাস্তবায়নে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের তিনটি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী-ষাঁড় লালন-পালন করেছেন।

গেল বছর তার স্বপ্ন হাতের নাগালে এলেও মহামারী করোনার ভয়াবহ থাবায় স্বপ্নই রয়ে গেছে। হাল না ছেড়ে হামিদা আক্তার খামার তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ এসেছে।

সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালনে এরই মধ্যে বড় করে তুলেছেন ৪৫ মণ ওজনের ষাঁড় মানিককে। পাঁচ বছর বয়সী বিশালাকৃতির ‘মানিক’ এবারের কোরবানির হাট কাঁপাবে- এমনটাই আশা তার।

হামিদা আক্তার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ ও রিনা বেগমের মেয়ে। তিনি টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজ থেকে ইতিহাসে অর্নাস পাস করেছেন। এখনও পড়ালেখার পাশাপাশি গরুর বড় খামারী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। অবশ্য এ স্বপ্ন তার আজকের নয় ২০১১ সালের।

আব্দুল হামিদ ও রিনা বেগমের তিন মেয়ের মধ্যে হামিদা আক্তার বড়। ভিটেবাড়িসহ বাবার জমি মাত্র ৫০ শতাংশ। বাবার পক্ষে তিন বোনের পড়ালেখা এবং সংসারের খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য। তাই ২০১১ সাল থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি দর্জির কাজ শুরু করেন। দর্জির কাজ করার সময়ই স্বপ্ন দেখেন গরুর বড় খামারী হওয়ার।

স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি প্রথমে রাজহাঁস ও কবুতর লালন-পালন এবং বিকাশ এজেন্ট ও ফ্ল্যাক্সি লোডের ব্যবসা করতে থাকেন। মনের সুপ্ত বাসনার বহি:প্রকাশ হিসেবে ২-১টি করে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরু পালন শুরু করেন। এসবের আয় থেকে চলছে তিন বোনের লেখাপড়াসহ সংসারের সকলের ভরণ-পোষণ। এরই মধ্যে দুই বোনকে এইচএসসি পাস করিয়ে একজনকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্যজন নার্সিং-এ পড়ালেখা করছেন।

সফল উদ্যোক্তা হামিদা আক্তারের গরুর বড় খামারী হওয়ার স্বপ্ন এ বছর তার দোড়-গোড়ায়। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন ৪৫ মণ অর্থাৎ ১৮শ’ কেজি ওজনের অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। নাম দিয়েছেন ‘মানিক’। দাম হাকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।

মানিককে বিক্রি করে ভালো দাম পেলে খামারের জন্য একটি ঘর তৈরি করবেন। সেখানে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি ও ষাঁড় লালন-পালন করা হবে।

উদ্যোক্তা হামিদা আক্তার দাবি করেন, জানামতে তার ৪৫ মণ ওজনের মানিকই জেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড়। ষাঁড়টি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন মানুষ তার বাড়িতে ভির করছেন। ন্যায্য দামে ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারলে তার খামার করার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হবে।

গরু লালন-পালন সম্পর্কে হামিদা আক্তার জানান, পরিবারের সদস্যের মতোই তার অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরুগুলো বড় হচ্ছে। গোয়াল ঘরে দুটি সিলিং ফ্যান ও মশারি রয়েছে। নিয়মিত খাবারের তালিকায় খর, ভুষি, কাঁচাঘাস, মাল্টা, পেয়ারা, কলা, মিষ্টি কুমড়া ও মিষ্টি আলু রয়েছে।

রোগ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। মানিকের পেছনে দৈনিক খাবার লাগছে ১৭ কেজি গমের ভুষি, ৪ কেজি ছোলা, ২ কেজি খুদের ভাত, আধা কেজি সরিষার খৈল। এছাড়া দৈনিক তাকে খাওয়ানো হচ্ছে নানা জাতের পাকা কলা। বর্তমানে মানিকের ওজন ৪৫ মন অর্থাৎ ১৮শ’ কেজি বলে দাবি করেন হামিদা।

তিনি জানান, পাঁচ বছর আগে তার বাড়িতে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গাভি থেকে মানিক ও রতন নামে দুটি ষাঁড় বাছুর জন্ম নেয়। গেল বছর কোরবানির হাটে ওই ষাঁড় দুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। গত বছরই মানিকের ওজন ছিল ৩৫ মন এবং রতনের ওজন ছিল ৩৪ মন। দাম চেয়েছিলেন মানিকের ১৪ এবং রতনের ১৩ লাখ টাকা।

পাইকাররা বাড়িতে এসে মানিকের দাম বলেছিলেন ৯ লাখ টাকা। কিন্তু বাকিতে চাওয়ায় মানিককে আর বিক্রি করা হয়নি। পরে মানিক ও রতনকে ঢাকার গাবতলী হাটে নেওয়া হয়। করোনার কারণে হাটে নিয়েও সুবিধা হয়নি। মাত্র ৪ লাখ টাকায় রতনকে বিক্রি করা হলেও মানিককে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

হামিদা আরও জানান, তিনি বাড়ি থেকেই ষাঁড় বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। বাড়িতে এসে যদি কোন ক্রেতা ন্যায্য দাম দেন- সেক্ষেত্রে নিজ খরচে মানিককে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেবেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে হামিদা আক্তার জানান, তিনি চাকুরির জন্য পড়ালেখা করছেন না। তিনি একজন বড় গরুর খামারী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এ বছর ভালো দামে মানিককে বিক্রি করতে পারলে তার স্বপ্নের খামারটি নির্মাণ করবেন। ওই খামারে লালন-পালন করবেন ভালো জাতের সব গরু।

হামিদা আক্তারের মা রিনা বেগম জানান, তার মেয়েদের জন্মের আগে থেকেই ওদের বাবা গরু লালন-পালন করতেন, যা দেখে হামিদাও গরু লালন-পালনে আগ্রহী হয়েছে।

লাউহাটি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বুদ্দু জানান, হামিদা আক্তার একজন কৃষক বাবার মেয়ে ও কলেজ ছাত্রী এবং একজন ভালো উদ্যোক্তা। তিনি বেশ কিছুদিন যাবৎ গরুও লালন-পালন করছেন। তার ছোট খামারে এবার ৪৫ মন ওজনের একটি ষাঁড় গরু হয়েছে। দরিদ্র পরিবারের ওই মেয়ের ষাঁড়টি ভালো দামে বিক্রি হোক।

লাউহাটি ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন মোহাম্মদ খান জানান, উদ্যোক্তা হামিদার গরু লালন-পালনকালে তিনি কারও কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাননি। তিনি বড় ধরণের গরুর খামার করতে যদি সহযোগিতা চান- অবশ্যই করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বাহাউদ্দিন সারোয়ার রিজভী জানান, সম্ভববত জেলায় হামিদার ষাঁড়টিই সবচেয়ে বড়। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে (অনলাইন হাট) তার ষাঁড়টির ছবি, ওজন ও দাম উল্লেখ করে বিক্রির জন্য প্রচারণা চালানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap