ঘাটাইলে মৃত ব্যাক্তির নামে তুলা হচ্ছে প্রকল্পের টাকা

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মকবুল হোসেন মারা গেছেন চার মাস আগে। অথচ অতিদরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের তালিকার ৩৫২ নম্বরে তাঁর নাম। মকবুলের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের কোলাহা গ্রামে। তালিকাটি ওপর মহলে চলে গেছে। যে কোনো সময় টাকা পাঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ প্রকল্পের কাজ হয় দুই ধাপে। টাকাও ছাড় হয় দুই ধাপে। মকবুলের নাম প্রথম ধাপেও ছিল। প্রথম ধাপে শ্রমিকের তালিকায় নাম ছিল কলেজ ও স্কুলশিক্ষক, পল্লি চিকিৎসক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাসহ অনেকের।

এ নিয়ে গত ১৬ মে ‘অতিদরিদ্রদের টাকায় ভারী চেয়ারম্যানের পকেট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরুর আগে শ্রমিকের তালিকা ঠিক আছে মর্মে সব ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন চেয়ে চিঠি দেন ইউএনও। সেই প্রত্যয়নসহ তালিকাতেও রয়েছে মৃত মকবুলের নাম।

তাঁর স্ত্রী রুকিয়া বেগম জানান, তালুকদার বাড়ির জইদ আলীর নাতি তাঁকে ছয়শ টাকা দিয়ে গেছেন গত ঈদের আগের দিন। এর বাইরে কিছুই বলতে পারেন না তিনি।

কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা এবারই প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে জিটুপি (সরকার হতে জনগণ) পদ্ধতিতে শ্রমিকদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত মোবাইল ফোন নম্বর ও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নিয়ে শ্রমিকদের নামের তালিকা করা হয়।

প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তদারকি করেন উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। তাঁর সহযোগিতার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকেন।

প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হয়েছে গত ৮ জুন। ১০ জুন বিকাশের মাধ্যমে মজুরি দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে। শ্রমিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে ওপর মহলে। এ তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে দিঘলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, প্রথম ধাপের তালিকাই জমা দেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম আছে কিনা তালিকা দেখে বলা যাবে।

তবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য হাতেম আলীর দাবি, মকবুল হোসেন নামের কোনো শ্রমিক নেই।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে ১৪টি ইউনিয়নে ৪১টি প্রকল্পে ১ হাজার ১৬৫ শ্রমিকের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ হয় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রথম ধাপেও একই বরাদ্দ ছিল। জনপ্রতি চারশ টাকা হারে একজন শ্রমিক ৪০ দিন কাজ করলে পাবেন ১৬ হাজার টাকা। প্রথম ধাপে শ্রমিকের তালিকায় অসংগতির বিষয়ে প্রত্যয়নসহ তালিকা চাওয়া হলে যথাসময়ে দিতে ব্যর্থ হন চেয়ারম্যানরা।

তাই ৪০ দিনের মধ্যে কাজ হয়েছে মাত্র ৮ থেকে ১০ দিন। প্রকল্পের কাজ না হওয়ায় ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮ হাজার ১০০ টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয় ধাপে শ্রমিকের তালিকা না দেওয়ায় ঘাটাইল সদর ইউনিয়নে কোনো কাজ হয়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হিরা বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে তালিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, যে মোবাইল নম্বরে প্রকল্পের টাকা আসে, সেই নম্বরের সিমকার্ডগুলো শ্রমিকদের হাতে নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হিরা বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন, কিছু সিম শ্রমিকদের হাতে আছে আর কিছু রাজনৈতিক নেতাদের কাছে। তা ছাড়া তালিকা হয়েছে তাঁর নির্বাচনের আগে।

টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়ে রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক সরকার বলেন, উপজেলা প্রশাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যানদের সমন্বয়হীনতার কারণে টাকা ফেরত যাচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, চেয়ারম্যানদের থেকে প্রাপ্ত শ্রমিকের তালিকা ওপর মহলে পাঠানো হয়েছে। যদি মৃত ব্যক্তির নাম থাকে, তার দায়ভার চেয়ারম্যানের।

ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিয়া চৌধুরী বলেন, তালিকায় মৃত বক্তির নাম থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় এবং ইউপি চেয়ারম্যানরা প্রত্যয়ন দেরিতে দেওয়ায় প্রকল্পের অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap