ভালো দাম পাওয়ায় আনারসের আবাদও বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আনারসের রাজধানী বলা হয় টাঙ্গাইলের মধুপুরকে। কয়েকবছর ধরে মধুপুরের পাশাপাশি ঘাটাইল ও সখিপুর উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় প্রচুর আনারসের আবাদ হচ্ছে। টানা তাপদাহে গরমের কারণে এ বছর আনারসের দাম আরো বেড়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় পাহাড়ে আনারসের আবাদও বেড়েছে বলে জানান চাষিরা।

চাষিরা জানান, মধুপুর গড় তথা মধুপুর, ঘাটাইল ও সখিপুর এলাকার পাহাড়িয়া এলাকায় জলডুগী বা হানি কুইন ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারসই বেশি আবাদ হয়। সাধারণত আনারসের চারা রোপনের দুই বছর পর পরিপক্ক হয় এবং ফল আসে। বর্তমানে চাষিরা নানারকমের রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের কারণে চারা রোপণের এক বছরের মধ্যেই ফল আসে। তবে ওই সব আনারসে প্রকৃত স্বাদ থাকে না।

ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকা মোমিনপুর, শোলাকুড়ি, সাগরদিঘী, আষাঢ়িয়াচালা, রামদেবপুর, সিংহচালা, দুলালিয়া, সিদ্দিখালী, মুরাইদ, রসুলপুর, বেইলা, লক্ষিন্দর, ফটিয়ামারি, কাজলা, ছোনখোলা, জোড়দীঘি, শহরগোপিনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আনারস চাষ হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি। এদিকে, মধুপুর উপজেলায় গত বছরের চেয়ে এবার ৭ শ হেক্টর বেশি জমিতে আনারস চাষ হয়েছে।

ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গারোবাজার এবং মধুপুরের জলছত্র আনারস ক্রয়-বিক্রয়ের বড় হাট। প্রতি সপ্তাহের রোববার ও বুধবার গারোবাজারে আনারসের হাট বসে। এছাড়া, আনারসের ভরা মৌসুমে এ হাটে প্রতিদিনই আনারসের বাজার বসে।

বুধবার (২০ জুলাই) গারোবাজারের আনারসের হাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আনারস ক্রয়ের জন্য বাজারে এসেছেন। চাষিরা সাইকেল ও ভ্যানযোগে আনারস নিয়ে হাটে এসে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। পাইকাররা তাদের কাছ থেকে আনারস ক্রয় করে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করছেন। পরে তা ট্রাকভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা আনারস ক্রয় করে অটোরিকশা ও ছোট পিকআপযোগে যার যার গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের সানবান্ধা গ্রামের চাষি ছামাদ মিয়া জানান, বিগত কয়েক বছর ধরেই আনারসের দাম ভালো যাচ্ছে। তিনি এ বছরে ৯ হাজার চারা লাগিয়েছিলেন। চাষে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আনারস বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকায়।

গারোবাজারের স্থানীয় আনারসের পাইকার আয়নাল হক জানান, প্রতিটি আনারস ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। ক্রয়কৃত আনারস তিনি ঢাকা কাওরানবাজার পাঠাবেন বলে জানান। তাপদাহে গরমের কারণে আনারসের চাহিদা বাড়ায় এবারো ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। এতে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। দাম ভালো পাওয়ায় পাহাড়ে আনারসের আবাদও বেড়েছে।

উপজেলার কাজলা গ্রামের চাষি ইউনুছ মিয়া জানান, বাগান থেকে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি আনারসের খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা। বর্তমানে প্রতিটি আনারস ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করা যাচ্ছে।

গারোবাজারের স্কুলশিক্ষক সাজ্জাদ রহমান বলেন, দাম ভালো পাওয়ায় আনারসচাষিরা খুশি।   তারা লাভবান হওয়ায় আনারসের আবাদও বেড়েছে। তবে বিপণন খরচ, মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, পাশের উপজেলা মধুপুরে আনারস চাষ হয় বেশি। ঘাটাইল উপজেলায় আনারসের আবাদ আগের চেয়ে বেড়েছে। বর্তমানে আনারসের মৌসুম চলছে। চাষিরা গত কয়েক বছর ধরে আনারসের ভালো দাম পাচ্ছেন। তাপদাহে প্রচণ্ড গরমের কারণে এবার চাহিদা আরো বেড়েছে। ভালো দাম পেয়ে চাষিরাও খুশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap