ঘাটাইলে থামছে না লালমাটির পাহাড় কাটার মহোৎসব, অভিযোগ কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চলছে বর্ষা মৌসুম। বন্ধ ইটভাটার ইট প্রস্তুত কার্যক্রম। বিভিন্ন সময়ে চলছে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান। করা হচ্ছে জরিমানাও। তারপরও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে থামছে না লালমাটির পাহাড় কাটার মহোৎসব। এর ফলে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র।

স্থানীয়দের অভিযোগ প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাহাড়ের লালমাটি কাটার সঙ্গে জড়িত কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও একটি প্রভাবশালী মহল।

উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সন্ধানপুর ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ বাজার, বেলুয়াটিকি, সংগ্রামপুর ইউনিয়নের ছনখোলা ও দেওজানাসহ বিভিন্ন এলাকায় লালমাটির টিলা কাটা হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, বেলুয়াটিকি সরকারি প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশ থেকে পাহাড়ের লালমাটির টিলা কাটা হচ্ছে তিনমাস ধরে। এখানকার মাটিকাটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঘাটাইল ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মিলন। ওইস্থানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুবার অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় জরিমানাও করেছে কর্তৃপক্ষ। তারপরও থেমে নেই মাটিকাটা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়ের মাঠের পাশের টিলা ও জমি থেকে মাটিকাটার ফলে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালযের শিশু শিক্ষার্থীরা যেকোন সময় ওই সব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর আলী জানান, মাটি ব্যবসায়ীরা বলেছেন- দুর্ঘটনারোধে গর্তের পাশ দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করে দিবেন। দেয়াল নির্মাণ করে না দিলে শিশুরা যেকেনো সময় দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একইভাবে উপজেলার ছনখোলা এলাকায় টিলা কাটার সঙ্গে জড়িত সন্ধানপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আজমত আলী। সংগ্রামপুর ইউনিয়নের দেওজানা বাজার এলাকার লাল মাটির টিলা কাটছেন ইউপি সদস্য মিন্টু। মুন্সিগঞ্জ বাজারের মাটি কাটছেন ঘাটাইল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুমন মিয়া। তারা মিলে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সময় প্রশাসন কিংবা স্থানীয়দের ম্যানেজ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।

তবে তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা মাটি কাটার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ইটভাটাগুলোতে ইট প্রস্তুত কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সচল রয়েছে মাটি সংগ্রহের কাজ। পাহাড় খেকো এসব মাটি ব্যবসায়ীরা টিলাকাটার মাটি বিক্রি করছে ইটভাটায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন নিচু জমি ভরাট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ের লাল মাটি।

এ বিষয়ে সংগ্রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করার পরও তেমন কোন পদক্ষেপ নেন না।

তার পরিষদের সদস্য মিন্টু মিয়া মাটিকাটার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

তবে ঘাটাইলর ইউনিয়নের সদস্য সুমন ও সাবেক মেম্বার মিলন এ কাজে জড়িত বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত একজন ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ পেলে অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap