নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিদ্যুতে মিতব্যয়ী হতে বিকল্প পথে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ। অসহ্য এই ভেপসা গরমে জ্বালানি স্বল্পতায় উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় দেশজুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে নিয়মমাফিক ভাবেই।
কিন্তু মধুপুরে এ নিয়মকে যেন বৃদ্ধঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। আগামীতে এই লোডশেডিং আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে বলে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা সতর্কবাণী দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য থেকে জানা যায় দিনে গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান জ্বালানী গ্যাসের সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে তাই সারাদেশে লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের পরিস্থিতি অনেক খারাপ। একে তো প্রচন্ড গরম তার উপর বিদ্যুৎ নেই মাত্রাতিরিক্ত ভাবে। দিনে ৪ থেকে ছয় ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন বিদ্যুৎ যাচ্ছে এবং আসছে কখন সেটা বলা যয়না। দুর্ভোগ থেকে মুক্তির জন্য সৌর বিদ্যুতের প্যানেল কেনার হিড়িক পরেছে মধুপুরের বিভিন্ন সোলার প্যানেলের শোরুমগুলোতে।
বিদ্যুতের লোডশেডিং থেকে রেহাই (রক্ষা) পেতে সোলার প্যানেল সিস্টেম ব্যবহার দিকে বেড়েছে আগ্রহ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে সোলার ফ্যান, ব্যাটারি, প্যানেলের, দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মধ্যবিত্ত আয়ে সাধারণ মানুষ।
মধুপুর শহীদ স্মৃতি রোডের সঞ্চিতা এন্টারপ্রাইজ নামের ইলেকট্রিক সামগ্রির দোকানে প্রতিদিনই ভীড় বাড়ছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই চলছে একই চিত্র।
মধুপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা তরণ খালেদুজ্জামান মানিক ছিলেন একজন উদ্যোক্তা। রাতভর তার কাজ চলতো। এখন কাজ না করলেও প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের ব্যবহার তার সর্বদিক দিয়ে আগের মতোই। কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুতহীন থাকতে থাকতে তিনি বিরক্ত হয়ে গেছেন। তাই দুটো ফ্যান চালানো, চারটি বাতি¦ জ্বালাতে সাধ্যের মধ্যে সোলার বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে মধুপুরের দি অ্যাকটিভ ইলেকট্রিসিটি, সঞ্চিতা ও পাহাড়ী ফুল নামের তিনটি দোকান ঘুরে দোকানীদের কৌশলী ইস্টিমেটে তিনি সন্দিহান।
তিনি বলেন, চাহিদা দেখে প্রতিদিনই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। ১৩০ ওয়াটের প্যানেল তৈরিতে এক মাস আগের তুলনায় তিন হাজার টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে বর্তমানে।
সঞ্চিতার মালিক আশুতোষ মালাকার সোলার প্যানেলের সব কিছুর দাম দিন দিন বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে বলে বিক্রির দামও বেড়ে যাচ্ছে। তার দোকানে আসা ক্রেতারা জানান,বাজার বেশ অস্থির।
মধুপুর কুড়াগাছা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা সোলার বিক্রেতা রিপন মিস্ত্রি বলেন, লোডশেডিংয়ের নামে বিদ্যুৎ গ্রামে থাকছেই না। স্বাভাবিক জীবন অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অন্তত ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, সন্ধ্যার রান্না-বান্না আর রাতে খাওয়ার কাজটা নির্বিঘ্ন করতে সৌরবিদ্যুৎ নিচ্ছেন গ্রমের মোটামুটি স্বচ্ছলরা পরিবারগুলো।
তিনি আরও জানান, গত এক সপ্তাহে আমি ৫০ টির বেশি সোলার, আইপিএস লাগানোর অগ্রিম টাকায় অর্ডার পেয়েছি। কিন্তু এর আগে মাসে ২/৪ টি অর্ডার পেতাম।
মধুপুর জলছত্র এলাকার ডিস ব্যবসায়ী মো. শাহিন আলম বলেন, আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। কিন্তু ঈদের পর থেকে লোডশেডিংয়ের কারণে ডিস লাইন চালাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামে আমাদের ফিড লাইনে সমস্যা হচ্ছে। গ্রাহকরা বিক্ষুব্দ হয়ে উঠছেন। তাই গত সোমবার বাড়তি অর্থ খরচ করে আইপিএস সিস্টেম চালু করেছি।
গেদা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসিং এর স্বত্বাধিকারী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রয়োজনের সময়ে নিজেদের মতো করে লাইট, টিভি ও ফ্যান ব্যবহার করতেই সৌরবিদ্যুৎ ও আইপিএস ব্যবহার করছে মানুষ। আর বর্তমানে দেশে যে অবস্থা বিদ্যুৎ তো অতিথির মতো। যায় আর আসার খবর থাকে না। তাই এই বিকল্প হিসেবে সোলার লাগাচ্ছে। প্যানেল, ব্যাটারী পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। দাম কিছু টা বাড়লেও সাধ্যের মধ্যে আছে। কিন্তু কিছু অসাধু ও খুচরা ব্যাবসায়ীরা ক্রাইসিস দেখিয়ে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, আমি রিমসোর অনুমোদিত ডিলার এবং জুই পাওয়ার আইপিএস এর ইনপোর্টার। ন্যায্য মূল্যে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা দিচ্ছি। অনেক চাহিদা বাড়ছে সৌর বিদুতের।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র মধুপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইয়াহিয়া আকন্দ জানান, বিদ্যুতের উৎপাদনে জ্বালানির সরবরাহ বাড়ার সুযোগ নেই। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে না। কিন্তু চাহিদা বাড়ছে। তাই সরকার বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে সবার প্রতি আহবান জানিয়েছে। কেউ বুঝে আবার কেউ নিজের প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থায় বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করছেন।
Leave a Reply