নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরে শুরু হয়েছে কফির চাষ। গড় এলাকার উঁচু ও লাল মাটিতে এই ফসলের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার ঐতিহাসিক শালবন এলাকার উর্বর মাটিতে প্রচুর ফসল ফলে। এ মাটি আনারস, কলা, আদা, কচু, হলুদ, পেঁপে, লেবু, ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারা ইত্যাদির জন্য প্রসিদ্ধ। সম্প্রতি “কাজু বাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ” প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকরা কফির চাষ শুরু করেছেন।
ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতা অনুকূলে থাকায় এ অঞ্চলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।
মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থানীয়দের কৃষকদের মাধ্যমে মধুপুরে ১১ হেক্টর জমিতে কফির চাষ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৫৩ জন কৃষকের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। পৃথিবীতে ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে দু’রকমের কফির চাষ হয়।
এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য “অ্যারাবিকা” ও “রোবাস্টা” জাতের কফির চাষ শুরু হয়েছে। চাষোপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূল থাকায় উন্নতমান এবং মনমাতানো ঘ্রাণের কফির চাষ সম্প্রসারণের জন্য এ প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম চলছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, রোবাস্টা জাতের কফি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খুব উপযোগী। তাই টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে এর চাষ সম্ভব।
মধুপুর সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মহিষমারা গ্রামে ছানোয়ার নামে এক কৃষক কয়েক বছর আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কফির চাষ শুরু করেন।
কৃষক ছানোয়ার জানান, শিক্ষকতা ছেড়ে পাঁচ বছর আগে শখের বশে কফি চাষ শুরু করেন। রাঙ্গামাটি জেলার রায়খালী থেকে ২০০ চারা সংগ্রহ করেন তিনি। মহিষমারা গ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে তোলেন স্বপ্নের কফি বাগান।
ছানোয়ারের দাবি, মধুপুরে তার হাত ধরেই প্রথম কফির চাষ শুরু। প্রায় দুই বিঘা জমিতে তার কফি বাগান। রয়েছে প্রায় ৬০০ পরিপক্ব গাছ। প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় কফি ঝুলছে। এ যেন এক খণ্ড কফির রাজ্য।
বাগানের কফির চারাগুলো দেখতে কিছুটা দেবদারু চারার মতো। টাঙ্গাইলের কৃষিতে এ ফসল এক নতুন সংযোজন। কফির পাকা গুটিগুলো দেখতে টকটকে লাল, কোনো কোনোটি আবার কাঁচা হলুদের মতো। কাঁচাগুলো সবুজ। বাগানের মধ্যে কফি ছাড়াও অন্যান্য জাতের কিছু গাছও রয়েছে।
মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিপক্ব গাছে ফুল ধরা শুরু করে। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল গুটিতে পরিণত হয়। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গুটিগুলো পরিপক্ব হয়। পরে এই গুটিগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও পানের উপযোগী করতে মেশিনে গুড়া করে নিতে হয়। আবার কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় বলেও জানান তিনি।
ফলন ভালো ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হেক্টর প্রতি ৭৫০ থেকে ১০০০ কেজি এবং প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ১ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়ভাবে কফির দাম নির্ধারিত না থাকলেও চাষি ছানোয়ার হোসেন গ্রিন কফি ১৫০০ ও প্রসেসিং করা কফি ২৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। মধুপুর অঞ্চলে কফি চাষ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসেব মিলবে প্রকল্পের সাফল্যের ভিত্তিতে। কাঙ্ক্ষিত ফলন ও বাণিজ্য সুগম হলে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের। নতুন দিগন্ত আনবে কফি চাষ। এমনটাই আশা স্থানীয়দের।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, “বৃষ্টিপাত, মাটির গঠন বিন্যাস মিলে গড় এলাকার লাল মাটিতে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ এলাকায় সহজে বন্যার পানি ওঠে না। তেমন খরা হয় না। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের আন্তরিক সহযোগিতায় এ এলাকায় কাজু বাদাম, কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৩ জন কৃষকের ১১ হেক্টর জমিতে কফির চাষ শুরু হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “কৃষকরা যাতে চাষে সাফল্য পায় সেজন্য প্রশিক্ষণসহ প্রকল্প অনুযায়ী সহযোগিতা করা হচ্ছে।”
Leave a Reply