পাহাড়ি জনপদে চুরির হিড়িক, বেড়েছে জুয়া ও মাদকাসক্ত

ঘাটাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, মধুপুর ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার সাগরদিঘী, লক্ষিন্দর, দুলালিয়া, মহিষমারা শালিকা, বড়বাইদ ও সাপমাড়া এলাকায় চুরির হিড়িক পড়েছে। ঐ তিন উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের এক ডজন গ্রামে মাদক, জুয়া, চুরি ছিনতাই সহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে জনমনে বিরাজ করছে চরম হতাশা। পুলিশ জনগণকে যে সেবা দেয়ার কথা সে সেবা হয়ে উঠছে প্রশ্নবিদ্ধ,অপরদিকে অপরাধীরা প্রতিবারই পার পেয়ে বার বার থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। ফলে বির্তকিত হচ্ছে গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে সরকারের। জানা যায় ঘাটাইল সদর থেকে ২৮ কিঃ মিঃ দূরে পাহাড়ি এলাকা ভালুকা রোডে সাগরদিঘীতে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অবস্থান। ২০১৪ সালে তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর ঐ এলাকার মানুষের কল্যাণের কথা ভেবেই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য যে দু একজন বর্ণচোরা রাজনৈতিক নেতাদের প্রচ্ছন্ন ছায়ার কারনে এখন মানুষের অকল্যাণের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সাগরদিঘী লক্ষিন্দর ইউনিয়নে এ যাবত প্রায় তিন শতাধিক গরু ও শতাধিক মোটর সাইকেল চুরি সংঘটিত হয়েছে। অন্যান্য চুরিতো আছেই। জুয়া খেলা মাদক বিক্রেতার অভাব নাই। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কার্যকারি ভূমিকা না থাকায় ধীরে ধীরে সাগরদিঘী,মহিষমারা ও লক্ষিন্দর ইউনিয়নের মানুষ অপরাধীদের কাছে এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছে যে, চোরের উপদ্রব ও মাদক সেবীদের অত্যাচারে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। বাসা বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেখে মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাবে তার অবস্থাও নাই। মানুষ সর্বক্ষন আতঙ্ক ও চাপা ক্ষোভ নিয়ে বসবাস করছে। গত ১৪ জুলাই সাহাপাড়া প্রবাসী প্রণবের মা সন্ধ্যায় মন্দিরে পূজা দিতে গেলে ঘরের তালা ভেঙ্গে চুরি করে। একই রাতে সাগরদিঘী ইউনিয়ন কৃষকলীগের যুগ্ম আহবায়ক আজহারুল ইসলাম ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি লিটন সরকার সহ এক রাতে ৩ বাসায় চুরি করে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। হাতিমারা গ্রামের আকরাম হোসেন ও বেইলা গ্রামের চাল ব্যবসায়ী মজিবর রহমান সাগরদিঘী হাইস্কুল মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে মসজিদের সামন থেকে ২টি মোটরসাইকেল চুরি হয়। সাহাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন সরকারের বাজার রোডে হাজী এন্টারপ্রাইজ দোকান রেখে মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে ৫ বান্ডিল ইলেকট্রিক তার চুরি হয়। তাছাড়াও তদন্ত কেন্দ্রের ৫০০ মিটার দূরে টিভি ফ্রিজের দোকানদার রুমেল জানায় গত ৪ জুলাই তার শোরুমের পাশে মোটরবাইক রেখে দোকানে কাজ করছিল বিকাল ৫.৩০ তার বাইক চুরি হয়। ইতিপূর্বে ভালুকা রোডে তার বাসা থেকে সাড়ে তিনভরি স্বর্ণের গহনা, একটি ৭০ হাজার টাকা মূল্যের আইপ্যাক, ২টি মোবাইল সেট ও নগদ ৩৪ হাজার টাকা তালা ভেঙ্গে নিয়ে যায়। তার চুরি হওয়া গাড়ীর বিষয়ে তদন্ত কেন্দ্রে জিডি করলেও দায়িত্ব প্রাপ্তরা একবারের জন্যও যোগাযোগ করেন নাই বলে তিনি জানান। গারোবাজার গত মাসে হযরত টেলিকম ও সোহেল টেলিকমের টিনের চাল কেটে দুটি দোকান থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল সহ প্রায় আট লক্ষাধিক টাকা খোয়া যায়। এবিষয়ে হযরত টেলিকমের মালিক হযরত আলী জানান,মধুপুর থানায় অভিযোগ দিয়েছি,তদন্ত হয়েছে তারপর কতৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। কিছুদিন আগে গারোবাজার এক এজেন্ট ব্যাংকের সন্মুখ থেকে একটি দামী মোটর সাইকেল চুরি হয় যা সিসি ক্যমারার স্পষ্ট ফুটেজ রয়েছে তার পরও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অনুসন্ধানে জানা যায় সাধারন মানুষের প্রশাসনের প্রতি আস্থা না থাকায় বড় ধরনের কোন কারণ না হলে কেউ প্রশাসনের লোকদের নিকট যেতে চান না। গত রমজান মাসে মনোহরি দোকানদার মান্নানের বাসায় একাধিকবার চুরি হয়। পাশাপাশি জামালের বাসায় তালা ভেঙ্গে ৪৩ ইঞ্চি এল.ই.ডি টিভি চুরি হয়। এভাবে ভালুকা রোডের সুপারি ব্যবসায়ী ঈমান আলী মনোহারি দোকানদার শাহজাহান আলী ও ঘাটাইল রোডে হাবিবের দোকানে চুরি সংঘটিত হলেও পুলিশের কোন কর্ণপাত করেন নাই বলে জানান। এভাবে গত তিন বছরে গরু, বাইক, অটো ভ্যান, রিক্সা, বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি সহ আরো অনেক অপরাধ সংঘটিত হলেও তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্তরা কাউকে আটক কিংবা সনাক্ত করতে পারেন নাই বলে জানা গেছে। চোরের উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে লক্ষিন্দর ইউনিয়নের শাপলা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আঃ মালেক জানায়, সন্ধ্যার পর থেকে পাহাড়ী এলাকায় পাকা রাস্তার দুপারের মানুষ গরু চোরের উপদ্রুপে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। সাগরদিঘী ও লক্ষিন্দর ইউনিয়নের ১৫ হাজার পরিবার থাকলেও তার মধ্যে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ পরিবারেই চুরি সংঘটিত হয়েছে। সাগরদিঘী ও আশেপাশে বার বার চুরি সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী সাইফুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি আফসোস করে বলেন এলাকার সিংহভাগ মাদক সেবনকারী তাদের দৈনিক মাদক সেবনের টাকা সংগ্রহ করতে চোখের সামনে যা কিছু দেখছে তাই নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক। প্রায় প্রতিরাতেই কেন চুরি হচ্ছে জানতে চাইলে সাগরদিঘী ইউনিয়ন কৃষকলীগের যুগ্ম আহবায়ক আজহারুল ইসলাম জানান প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রাইমারী স্কুল মাঠে ও পাশের বাগানে মাদকের হাট বসে, কামালপুর এলাকায় প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া খেলা হয় পুলিশ সকল কিছু জেনেও কিছুই বলেন না। এখানে আইনের শাসন নাই বলেই এমনটা হচ্ছে।সাগরদিঘী লক্ষিন্দর এলাকায় মাদক, জুয়া ও চুরির বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান হেকমত সিকদারের নিকট জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রতিদিন এলাকায় চুরি হচ্ছে, জুয়া খেলা চলছে, এতো অন্যায় স্বাধীনতার পরে কোনদিন হয় নাই। যে মুহুর্তে মাদক সেবীরা তাদের মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে মানুষের বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা ভেঙ্গে দিন রাতে মানুষের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকজন প্রভাবশালী মাদকসেবী ও জুয়াড়ীদের জুয়াড় ফাঁদেপড়ে গারোবজারবাসির অনেকেই যখন সর্বহারা সেই মুহুর্তে সাগরদিঘী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ হুমায়ুন কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ  অস্বীকার করে জানান বর্তমানে মাদক, জুয়া ও চুরি জিরো টলারেন্স রয়েছে। তবে দুই একটা চুরি ব্যতীত অন্যান্য অভিযোগ সব মিথ্যা। সাগরদিঘী তদন্ত কেন্দ্রের আওতাভূক্ত প্রায় সকল গ্রামেই মাদক, জুয়া, চুরির ছয়লাব ঘটায় ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ আজহারুল ইসলাম সরকার (পিপিএম) এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন এই ধরনের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখা হবে। মাদক,জুয়া বা অনৈতিক কোন কর্মকান্ডের সাথে বাহিনীর কোন সদস্য জড়িত থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে বিভাগীয় শাস্তি সহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap