সাজ্জাদ রহমান ঘাটাইল থেকেঃ জীবিকার জন্য কত বিচিত্র কাজই না করতে হয় মানুষকে। তেমনি এক বিচিত্র পেশা পাহাড়ি লাল বড় পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা। বন জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করা হয় এ পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার ডিম। মাছ শিকারিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হচ্ছে এ পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার ডিম। এসব ডিম সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে ডিম শিকারির সংসার। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মাকড়াই এলাকার পাহাড়ি বনের ভিতর দেখা মেলে এমন এক পেশার মানুষের সাথে। তার নাম আবুবকর ছিদ্দিক। বয়স ৪৫ বছর। তিনি কাঠ ফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে ঘামার্ত শরীরে খোঁজে বেড়াচ্ছেন পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার বাসা,কখন মিলবে ডিম। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার কৈয়ারচালা গ্রামে। তিনি সু-দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারী আবুবকর ছিদ্দিক বলেন, সব পিঁপড়ার বাসায় ডিম পাওয়া যায় না। খোঁজতে হয় পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার বাসা। যেখানে মিলবে প্রচুর পরিমাণ সাদা রঙের ডিম। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে সংগ্রহ করতে হয় এই ডিম। সারা দিনে ১ থেকে দেড় কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পারি। তিনি আরো বলেন, এক সময় পিঁপড়ার ডিম সারাদিন সংগ্রহ করে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যেত। এখন সারাদিন পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করতে পারি। প্রতি কেজি পিঁপড়ার ডিম দোকানে সাধারণত ১৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। সাধারণত দেশীয় গাছগুলোতেই পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার বাসা বেশি পাওয়া যায়। তবে আমাদের এখানে শালবনে গাছের ডালের ডগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা মুখের লালার আঠা দিয়ে সংযুক্ত করে শক্ত বাসা তৈরি করে এ লাল পিঁপড়ার দল। ওই সব বাসাতেই সাদা সাদা ডিম দেয় পিপড়েরা। বড় বাসায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। ডিমগুলো মাছের খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। ডিম আস্ত না রাখলে মাছ খায় না। মাকড়াই এলাকার আমিন মন্ডল বলেন, ফুলবাড়ীয়া এলাকার অনেক লোক আমাদের এখানে আসে পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করতে। তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। তিনি জানান,এই কাজে কোনো পুঁজি লাগে না। এজন্য তারা এটাকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন। এই ডিমের ক্রেতা হচ্ছে বড়শি দিয়ে সৌখিন মাছ শিকারিরা। গ্রামের যারা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে কিনে নেয়ার জন্য বেপারিও আছেন। বেপারিরা কিনে নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা শহরে আবার কেউ কেউ ঢাকায় নিয়েও বিক্রি করে থাকেন। পানির নির্দিষ্ট স্থানে আধার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা রয়েছে অনেক। সাগরদিঘী বাজারের শৌখিন মাছ শিকারি আব্দুস সামাদ, এবাদুল্লা চৌধুরী জুয়েল এবং সাজাহান মিয়া জানান, পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার ডিম মাছ শিকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। মাছ শিকারিদের কাছে এর চাহিদা অনেক। তবে শুধু আবুবকর ছিদ্দিক নয়। পাহাড়ি লাল পিঁপড়ার ডিমে জীবিকা নির্বাহ করে গ্রাম বাংলার অনেক মানুষ।
Leave a Reply