নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দেশে বিদ্যুতের সাশ্রয়ে সরকারি অফিসগুলোর সময়সূচি পরিবর্তন করে সকাল ৯টার পরিবর্তে ৮টায় করা হলেও নির্ধারিত সময়ে কর্মকর্তারা আসেন না অফিসগুলোতে। এতে সকালে সেবা নিতে আসা মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন কর্মকর্তাদের জন্য।
রবিবার (২৮ আগস্ট) সকাল ৮টার পর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার একটি বাড়ি একটি খামার কার্যালয়ে একজন মাঠকর্মী ছাড়া পুরো অফিস ফাঁকা। সেখানকার কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের রুমটিও খালি পড়ে আছে। সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের অফিস কক্ষ খোলা থাকলেও তিনি নেই।
একই চিত্র উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিসে। সকাল ৮টা ৩৭ মিনিটে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহসিন রেজার অফিস কক্ষ পরিষ্কার করছেন একজন অফিস সহায়ক। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম.জি মাহমুদ ইজদানীর অফিস কক্ষের তালা খুলছেন অফিস সহায়ক। পাশের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারাও অনুপস্থিত। সকাল ৮টা ৪২ মিনিটেও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা কাজী হামিদুল হককেও পাওয়া গেলো না।
এদিকে, উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার তাহমিনা আক্তারের রুমে ফ্যান ও লাইট জ্বললেও তিনি নেই। ফলে ফাঁকা রুমে বিদ্যুতের অপচয় যেমন হচ্ছে, তেমনি সরকারি কোনো নির্দেশও তিনি মানছেন না। উপজেলা সমাজসেবা অফিসেও কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি সকাল সাড়ে ৮টায়।
সকাল ৮টা ৫০ মিনিটেও উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের তালাই খোলা হয়নি। নেই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারিও। এর পাশেই উপজেলা মৎস্য অফিস। মৎস্য কর্মকর্তা না আসলেও অফিসের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন।
এছাড়া উপজেলা পরিষদের বাইরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে একজন কম্পাউন্ড ছাড়া সকাল ৯টা ১০ মিনিটেও পাওয়া যায়নি কোনো কর্মকর্তাকে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার দেবনাথের অফিস কক্ষটিতে তালা ঝুঁলে আছে। এদিকে উপজেলার ভূমি অফিসের কক্ষ খোলা থাকলেও অনুপস্থিত নায়েবরা।
ফজলুল রহমানের বাড়ি উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের পাঁচতেরিল্লায় গ্রামে। তিনি সকাল ৮টায় উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয়ে এসেছেন একটি আবেদন ফরম জমা দিতে। কিন্তু অফিসে কাউকে না পেয়ে উপজেলা পরিষদের পাশেই একটি জায়গায় বসে অপেক্ষা করছেন।
ফজলুল রহমান বলেন, ‘সকাল সকাল অফিস শুরু তাই সকালেই আসছি। কিন্তু এসে কাউকে পাইনি। সকাল সাড়ে ৮টার বেশি বেজে গেলেও এখনও কেউ নেই অফিসের পিয়ন ছাড়া। ভাবছিলাম সকাল সকাল কাজ সেড়ে আরেকটি কাজে যাবো। কিন্তু সেটা আর হলো না।’
এসময় বিভিন্ন অফিসে সেবা নিতে আসা অনেকেই বলেন, ‘সকালেই আসছি যাতে তাড়াতাড়ি কাজটি শেষ করা যায়। কিন্তু সকালে এসে কাউকে পাওয়া যায় না ৯টার আগে। অনেক অফিসে ১০টার পর কর্মকর্তারা আসেন। আবার দুপুরের পর চলে যান।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কম্পাউন্ডার মোহসীন বলেন, ‘অফিসে লোকজন সংকট। তাই সকালে আমিই এসে সবকিছু করি। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্যার এসেছিলেন। হয়তো কোনো ফার্মে ভিজিটে গেছেন।’
উপজেলা সাব রেজিস্টার কামরুজ্জামান কবির বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে অফিস না খোলার বিষয়টি জানা নেই। জেনে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার দেবনাথ বলেন, ‘ঢাকায় দুইদিনের প্রশিক্ষণে রয়েছি। অফিসে লোকবল সংকট রয়েছে। যথা নিয়মেই অফিস খোলা হয়।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শহীদুজ্জামান মাহমুদ বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকেই উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নে একটি প্রোগ্রামে চলে আসছি। এছাড়া ইউনিয়ন মাঠকর্মীরা সকালে ইউনিয়নগুলোতে চলে যায়। কাজ শেষে অফিসে চলে আসে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত সময়েই উপজেলার সব কর্মকর্তাকে অফিস করার জন্য বলা হবে।’
Leave a Reply