নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে মন্দির ভেঙ্গে দেবালয়ের জমি দখলে গুজবে হামলায় উভয় পক্ষের ৮ জন আহত হয়েছে। গত ১২ আগস্ট উপজেলার লাহিড়ীবাড়ি (ফসলপাড়া) গ্রামের কুলাইতলার জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, লাহিড়ীবাড়ি গ্রামের মো.মহু উদ্দিন (৪৫), মোছা.রাশিদা বেগম (৪০), মো.শফিকুল ইসলাম (২৪) ও মো.অরশেদ আলী (২৫) এবং একই গ্রামের শ্রী ক্ষুধিরাম সরকার (৩৫), শ্রী পাগল দাসি (৫০), টুম্পা রানি (৩০) ও কানন বালা (৫৫)। আহতদের মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উভয় পক্ষ থানা ও আদালতে মামলা করেছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাহিড়ীবাড়ি গ্রামের কয়েকঘর হিন্দু পরিবার বংশাই নদীরপাড়ে কুলাই দেবতার বাস বলে পুরোনো একটি বটগাছের তলে বছরান্তে ভোগ দিত এবং মাঝে মাঝে চড়ক পূজা করত। গাছের চারপাশের ৩১৯ নং খতিয়ানের ৩৯ শতাংশ জমি তৎকালিন জমিদাররা সিএসে মন্তব্যের কলামে কুলাই দেবতা লিখে দেন। পরবর্তীতে হিন্দুদের সামাজিক কোন্দলের কারনে জমি দেখভালের অভাবে ৩ এর ২ অংশ জমিদারদের ওয়ারিশদের নামে আওআর হয়ে যায়। বটগাছের মাঝখানের ১৩ শতাংশ সরকারের খাস খতিয়ান হয়েছে।
গাছের পূর্বপাশের ১৩ শতাংশ জমি স্থানীয় ইউ.পি সদস্য মো.স্বাধীন হাসান (সেলিম) প্রায় ২৬ বছর আগে জমিদারের একাংশের ওয়ারিশদারের কাছ থেকে দলিল করে নেন। সেলিম মেম্বার সেখান থেকে ৫ শতাংশ অন্যত্র বিক্রিও করে দেন এবং অংশ ঘর তোলে দখলে যান। এ ২৬ বছর স্থানীয় হিন্দুদের কোন আপত্তি ছিল না।
গত ১৪ জুন বটগাছের পাশে বসবাসকারি মৃত মীর রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো.মহু উদ্দিন আওআরমূলে খাজনা-খারিজ করে জমিদারের একাংশের ওয়ারিশদারের কাছ থেকে ১৩ শতাংশ জমি দলিল করে নেন।
দলিল করে নেয়ার ২ মাস পর মহু উদ্দিন বটগাছের মাঝের খাস ১৩ শতাংশসহ পুরো ২৬ শতাংশের মধ্যে মহু গাছ রোপন করেন। স্থানীয় সুবিধাভোগি মুসলমানদের সহযোগিতায় হিন্দুরা মহুর গাছ উঠিয়ে দখলে নেন। মহু বাধা দিতে গেলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হিন্দুরা গুজব ছরিয়ে দেন মহু মন্দির ভেঙ্গে দিবালয়ের জমি দখলে নিয়েছেন। অথচ হিন্দুরা পরেরদিন বটগাছের দক্ষিণপাশে ৩পাতা টিনের একটি ছাপড়া ঘর তোলে একটি মূর্তি রেখে মন্দির তৈরি করেন।
মো.মহু উদ্দিন জানান,আমি আওআরমূলে খাজনা-খারিজ করে ৪৫ নং খতিয়ানের ১৩ শতাংশ জমি দলিল করে নিয়েছি।
স্থানীয়রা জানান, ওখানে অতিতে কোন মন্দির ছল না। হিন্দুরা শুধামাত্র মাঝে মাঝে বটগাছেরতলে তলে ভোগ দিত এবং চড়ক পূঁজা করত।
ওই গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মো.আব্দুল কদ্দুস মিয়া (৮০) জানান,হিন্দুদের সামাজিক মন্দির বটগাছ থেকে ৫শ মিটার দক্ষিণে। তাদের বিয়ে-শাদির সময় বর-কনে নিয়ে এই কুলাই গাছের নিচে আসত।
বটগাছের পাশের দোকান্দার মো. আলম খান (৪০) জানান,হিন্দুরা এ গাছেরতলে মাঝে মাঝে অনুষ্ঠান করত। বহু লোক সমাগম হত আমার দোকানের বেঁচাকিনিও ভালো হত। কিন্তু মহু পুরো জায়গা দখল করে গাছ লাগিয়ে ছিল। এমনকি আমার দোকানের সামনে দিয়েও গাছ লাগিয়ে ছিল।
স্থানীয় মো.আব্দুর রশিদ মিয়া (৫৫) জানান,বটগাছের ফাঁকা জায়গায় এলাকার কৃষকরা প্রায় ২ হাজার মণ ধানমাঁড়াই করে থাকেন। তাছাড়াও ওই জমির মাঝখান দিয়ে নদীর ওপারে যাওয়ার রাস্তা।
হিন্দু নেতা শ্রী রথিন্দ্রনাথ সরকার জানান,যখন আরওআর হয়,তখন আমাদের হিন্দুদের মাঝে বিভক্তির কারনে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এখন আমরা এক হয়ে কুলাই দেবতার জমি উদ্ধার চাই।
স্থানীয় হিন্দু সমাজের সাধারণ সম্পাদক শ্রী গোপিনাথ সরকার জানান, কাগজপত্র সংশোধন করার চেষ্টা করতেছি। দেবতার জায়গা উদ্ধার করতে স্থানীয় মুসলমান,জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছেন।
স্থানীয় ইউ.পি সদস্য মো.স্বাধীন হাসান সেলিম জানান, আমি জমি নিয়েছিলাম,এখন ওরা যেভাবে চায় সেভাবেই ফেরৎ দেব।
বেদখলকৃত মধুপুর মদন গোপাল দেব মন্দিরের ৯ একর ৫৩ শতাংশ জমি উদ্ধারের আন্দোলনকারি সনজিত কুমার আর্য্য জানান, বেতার জমি অন্যের নেয়ার কোন অধিকার নেই। দেবতার নামে সিএসের পর কাগজপত্র যার নামেই হোক সেগুলো অবৈধ। অবশেষে ওই জমি কুলাই দেবতার নামেই থাকবে।
সংগ্রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.আব্দুর রহিম জানান, স্থানীয় হিন্দুদের অভ্যান্তরিন কোন্দলের কারনে সিএস ভেঙে জমি অন্যেরা দলিল করে নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তবে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বসে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
Leave a Reply