ভ্রমণের ঐতিহাসিক স্থান মধুপুর গড়ের শালবন

বিশেষ প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের অনেক স্থান থাকলেও টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গড়ের শালবন একটি ঐতিহাসিক স্থান। বিশেষ করে মে মাসে শালের জীর্ণ পাতারা ঝরে পড়ে নতুন পত্রপুষ্পে সুশোভিত হয়। চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ ও বনের অভ্যন্তরে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও লতা-গুল্ম মন ভরিয়ে দেয়। তখন বনের মধ্যে এখানে সেখানে থাকে বেগুনী রঙ্গের জারুল বৃক্ষের মনকাড়া ফুলের বাহার।

তবে জুন মাস এলেই সেই দৃশ্যপট পাল্টিয়ে শালবনটি ঘন জঙ্গলে রূপ নেয়। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের আয়তন ২০,৮৪০ একর। প্রধান ফটক দিয়ে বনের মধ্যে ঢুকলে চোখপড়ে শুধু শালবন আর সবুজের সমারোহ। বনের অভ্যন্তরে আছে নানান জাতের, নানা বাহারের গাছ-গাছরা, যেমন-শাল, বহেড়া, আমলকি, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, অশ্বথ, বট সর্পগন্ধা, শতমূলী, জয়না, বিধা, আজুকি/হারগাজা, বেহুলা ইত্যাদি। আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ী আলু, শটি; আছে নাম না জানা বিচিত্র ধরণের লতা-গুল্ম। দর্শনীয় প্রাণীদের মধ্যে আছে অসংখ্য বানর, হনুমান, আছে নানান জাতের পাখ-পাখালি, হরিণ, বন বিড়াল, বনমোরগ, বাগডাসা ইত্যাদি। বনের ঠিক মাঝখানে আছে একটি হরিণ প্রজনন কেন্দ্র।

লহরিয়া বিট অফিস সংলগ্ন এই কেন্দ্রে দেখতে পাওয়া যায় চোখ জুড়ানো চিত্রা হরিণের বিচরণ। সেখানেও হনুমানের সমারোহ সকলকে মুগ্ধ করবেই। পাশেই সু-উচ্চ টাওয়ারে উঠলে মধুপুর পার্কের অভ্যন্তরে সবুজ বৃক্ষ-রাজী দেখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মুগ্ধ হতে হয়। সেখান থেকে দোখলা রেস্ট হাউজের দিকে রওনা হলে রাস্তার দু’পাশে দেখা যায় সবুজ শাল বন আর নানান প্রজাতির বৃক্ষরাজি। সেখানে নেই কোন জনারাণ্য। আছে শুধু শুনশান নিরবতা আর পাখ-পাখালির কলরব। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেট থেকে দোখলা রেস্ট হাউজ পর্যন্ত দুরত্ব প্রায় ১০ কিঃ মিঃ। সড়কপথে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশের প্রধান যানবাহন গাড়ি।

আশেপাশে বনের অন্যান্য স্থানে ঘুরলে আরও খানিকটা পথ পারি দিতে হয়। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের আশেপাশের এলাকাগুলো আদিবাসী অধ্যুসিত গ্রাম। জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ময়মনসিংহ বন বিভাগের রসুলপুর রেঞ্জ কার্যালয় অবস্থিত। উহার পাশেই আছে জলই রেস্ট হাউজ ও মহুয়া কটেজ। মধুপুর বনের অভ্যন্তরের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। সবুজ অরণ্যের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পরিবেশ নৈসর্গিক। ইট বিছানা রাস্তায় চলতে চলতে রাস্তার দুধারে সবুজ বন-বনানীর দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মন হারিয়ে যায় কোলাহলমুক্ত একটি নীরব-নিথর বনবিথির মাঝে।

কী দেখবেন: দোখলা রেস্ট হাউজ, চুনিয়া কটেজ, বকুল কটেজ, দুটি পিকনিক স্পট, জুই ও চামেলী বাগান। একটি ইউথ হোস্টেল ও একটি সু-উচ্চ টাওয়ার, আছে।পাশেই আছে একটি ছোট্ট বাজার, আশে-পাশে আছে আদিবাসীদের পল্লী। মধুপুর বনাঞ্চলের অরনখোলা মৌজার বনভূমিতে অবস্থিত বন বিশ্রামাগারটিই দোখলা রেস্ট হাউজ। টাঙ্গাইল জেলা সদর হতে ৬০ প্রায় কি.মি. দুরে এবং মধুপুর উদ্যানের প্রধান ফটক হতে ১০ কি.মি. ভীতরে এর অবস্থান।

এ অঞ্চলের বনভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা, বন্য প্রাণী ও জীব-বৈচিত্র অবলোকন করার সুবিধা এ রেস্ট হাউজের মাধ্যমে পাওয়া যায়। অধিকন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কিত শিক্ষা কার্যক্রমে বিশ্রামাগারটি গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদিবাসীদের জীবনধারা বিচিত্র। দোখলা পঁচিশমাইল রাস্তার শেষে জলছত্র এলাকায় আদিবাসীদের নিজস্ব তাঁতে বুনান বিভিন্ন ধরণের রেশম বস্ত্র শিল্পের বিক্রয় কেন্দ্র ‘‘কারিতাস’’।

উদ্ভিদবৈচিত্র্য: শাল, বহেড়া, আমলকি, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, অশ্বথ, বট সর্পগন্ধা, শতমূলী, জয়না, বিধা, আজুকি/ হারগাজা, বেহুলা প্রভৃতি নানা জাতের বৃক্ষরাজিতে শোভিত এই উদ্যান। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি আলু, শটি আর নাম না জানা বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্ম।

জীববৈচিত্র্য:এই বন পূর্বে চিতাবাঘ এর প্রিয় আবাস্থল ছিল ও বিস্তৃতিও ছিল বিশাল তবে বর্তমানে বানর, বুনো শূকর, মুখপোড়া হনুমান, হরিণ, মায়া হরিণ, শিয়াল, বন বিড়াল, মেছোবাঘ, বনরুই সহ ৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ; লাল বনমোরগসহ ৩৮ প্রজাতির পাখি, ৪ প্রজাতির উভচর ও কয়েক প্রজাতির সরিসৃপ পাওয়া যায়। বনের ঠিক মাঝখানে লহরিয়া বিট অফিসের কাছে রয়েছে একটি হরিণ প্রজনন কেন্দ্র।

কিভাবে যাবেন: টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ময়মনসিংহ যাবার পথে রসুলপুর মাজার নামক স্থানে গিয়ে বামপাশে মধুপুর জাতীয় উদ্যানের প্রধান ফটক। ফটকের পাশেই মধুপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জ অফিস ও সহকারী বন সংরক্ষকের অফিস অবস্থিত। সেখানে গাড়ি থামিয়ে গেটে অনুমতি নিয়ে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হয়। তাছাড়া আরও একটু সামনে ২৫ মাইল নামক স্থানে গিয়ে ডানদিকে প্রায় ৯ কিঃ মিঃ পথ পাড়ি দিয়ে দোখলা রেঞ্জ অফিস এবং দোখলা রেস্ট হাউজ-এর অবস্থান। সেখানেও অনুমতি নিয়ে বনের অভ্যন্তরে ঢুকতে হয়।

কোথায় থাকবেন:উদ্যানের ভীতরে দোখলা নামক স্থানে দোখলা রেস্ট হাউজ, চুনিয়া কটেজ, বকুল কটেজ নামে কয়েকটি কটেজ রয়েছে। কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এখানে রাত্রিযাপন করতে পারেন। এখানে খাওয়া দাওয়া সহ সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। যাত্রিযাপনের জন্য একটি আদর্শ স্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap