ঘাটাইলের সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেকমত শিকদারের অনিয়ম-দুর্নীতি আর নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেকমত শিকদারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। তার অনিয়ম-দুর্নীতি আর নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা ও জামায়াত-বিএনপি আখ্যা দিয়ে হেনস্তা করেন সাধারণ মানুষকে। তবে এসব অভিযোগ অপপ্রচার বলেছেন ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার

জানা যায়, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বদলি করার হুমকি, গত ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় গুপ্তবৃন্দাবন কেন্দ্র্রে মালেক হত্যা মামলা ও সাগরদীঘি এলাকার অ্যাডভোকেট ফরহাদ হত্যা মামলার আসামি, সম্মানিত লোকদের অসম্মান করা, সাধারণ মানুষকে অন্যায়ভাবে হেনস্তা করা, কর্মসৃজন প্রকল্পের অতিদরিদ্র টাকা আত্মসাৎ, বন বিভাগের জমি দখল করে লেবু ও কলার বাগান, লেবু বাগান, ড্রাগন বাগান তৈরি করা, সাগরদীঘি কলেজের শিক্ষক নিয়োগসহ চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ, প্রকাশ্য দিবালোকে সংরক্ষিত বনের শাল ও গজারির বাগান কাটা, সরকারি ভূমি দখল, নিজ ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারকে গ্রাম পুলিশকে মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ ছাড়াও হেকমত সিকদারের ‘সিকদার বাহিনী’ নামে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছেন ওই চেয়ারম্যান। এ গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক, ইভটিজিং, জমি দখল ও চুরির অভিযোগ। তাদের অত্যাচারে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে ভয় পায়। স্কুলে যেতে পারে না।

স্থানীয়রা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত সিকদারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানির প্রতিবাদে এলাকাবাসী গত ৪ঠা আগস্ট সাগরদীঘি চৌরাস্তা মোড়ে মানববন্ধন করেন। এ সময় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় এলাকাবাসীর পক্ষে মামলা দায়ের করলে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

সাগরদীঘি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সামছ উদ্দিন জানান, বেশ কিছুদিন আগে হেকমত সিকদারের ছেলে আপন স্কুলের এক ছাত্রীকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় রক্ষা পায়। এ বিষয়ে ঘাটাইল থানায় অপহরণ চেষ্টার মামলাও দায়ের করেছেন ওই ভুক্তভোগীর পরিবার। সাগরদিঘী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. জিন্নত আলী জানান, হেকমত সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী এই নেতা দলটারে ছিন্ন ভিন্ন করে দিলো। তিনি গায়ের জোরে চেয়ারম্যান হয়ে নিজের উন্নয়ন ব্যতিত

ইউনিয়নের কোনো উন্নয়নের কাজ করেননি। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে মেম্বারদের এনে দেবে বলে একেকজনের কাছ থেকে এক থেকে দেড় লাখ করে টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। এ ছাড়াও সাগরদিঘী কলেজে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় এক কোটি আশি লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।

তিনি আরো জানান, গোটা সাগরদিঘী ইউনিয়নে যতগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে প্রায় সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলে পিয়ন ও নৈশপ্রহরী নিয়োগের কথা বলে একেকজনের কাছ থেকে ৫-৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া তার বাড়ির পাশে কোচিং সেন্টার করে সেটি প্রাইমারী স্কুল করে দিবে বলে ৬ জনের কাছ থেকে ৪২ লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও গরিব অসহায় মানুষকে রিলিফ, ভাতা কার্ড, প্রতিবন্ধী কার্ডসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলেও হাতিয়ে নিয়েছেন ১২ লক্ষাধিক টাকা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ হেয় করার জন্য মাঝে-মধ্যেই আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। ইতোমধ্যে তারা আমার বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে। যতই অপপ্রচার চালানো হোক, আমি সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবো। কে কি বললো তাতে কিছু যায় আসে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap