টাঙ্গাইলে বাড়ছে ঘোড়া প্রতিপালন

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সে কালে, ঘোড়া একমাত্র যোগাযোগের বাহন অথবা মাধ্যম থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় আজ তা অনেকটাই বিলুপ্ত বা হাসির কান্ড! আগে অভিজাত শ্রেণী তথা রাজা-বাদশাগণ ঘোড়া বা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে চলতেন এ কথা যান্ত্রিক যুগে বে-মানান হলেও ইহাই যে বাস্তব সত্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এমনও শোনা যায়, ঘোড়া ও কবুতরের মাধ্যমে চিঠিও আদান-প্রদান হতো সে যুগে। শুধু রাজা-বাদশা নন, সাধারন মানুষও দুই বা তিন যুগ আগে ঘোড়ায় চড়েই প্রয়োজন অনুযায়ী চলতেন তার সাক্ষী অনেকেই এখনও স্মৃতিচারণ করে। প্রভূভক্ত প্রাণীদের মধ্যে ঘোড়া বিশেষভাবে অন্যতম এ কথা অ-স্বীকার করার উপায় নেই যা ঘোড়ার ঐতিহ্য ও ইতিহাস বলে দেয়। মালিক বিপদে পড়লে ঘোড়ায় রক্ষা করার চেষ্টা বা দৌড়ে বাড়ি এসে মালিক পক্ষের লোকদের আচরণ দিয়ে জানান দেওয়া অথবা কেউ পায়ের সামনে ভুল করে পড়ে গেলে পাঁ না উঠানোসহ হাজারো কথা প্রচলন আছে ঘোড়ার প্রভূভক্তি নিয়ে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে যোগাযোগের নতুন নতুন বাহন যোগ হলেও টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, সখীপুর, মধুপুরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় এখনও ঘোড়া পালন ও ব্যবহার সর্বদাই চোখে পরার মতো। যদিও অভিজাত শ্রেণী থেকে তা নিম্নবিত্তের হাতে। এসব উপজেলা পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় লাল মাটির কাঁদাপূর্ণ রাস্তায় সাধারন ও বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজটি ঘোড়ার গাড়ি দিয়েই করতে হয়।

আবার সখের বশে বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেল থাকতেও ঘোড়া পালন করছে কেউ কেউ।

ঘাটাইলের সুন্দইল পাড়া গ্রামের ঘোড়ার গাড়ির মালিক বাবলু মিয়া, হাকিম উদ্দিন (হাক্কি), আবুল হোসেন ও সখীপুরের পোড়াবাসা গ্রামের শুকুর আলী, জামাল হোসেনকে গতকাল সোমবার (১৯সেপ্টেম্বর) একত্রে পেয়ে কথা হয় ঘোড়া পালনের খুঁটিনাটি নিয়ে।

বাবলু মিয়া বলেন, “বিহানা (সকালে) ঘোড়ারে সাবান – শ্যাম্পু দিয়া ধুয়াই (গোসল) হেরপর ছোঁলাবুট ও ভুট্টার গুড়া খাওয়াই। দুপুরে ধানের কুড়া ও গোমের (গম) ভূষি এট্টু বিট লবন মিশাইয়া খাওয়াই। আর এবাই ঘাস তো খাওয়া-ই।

দৈনিক কতো টাকা উপার্জন করা যায় জানতে চাইলে জামাল হোসেন বলেন, “ঘোড়ারে ঠিকমতো খাওয়াইতে পারলে দৈনিক পনেরো’শ থেকে দুই হাজার টাকা কামানো ব্যাপার-ই না” ঘোড়া দাঁড়িয়ে ঘুমানো প্রসঙ্গে আবুল হোসেন বলেন, “আগে হুনছি খাড়ই-য়া (দাঁড়িয়ে) ঘুমাইতো এহন তো দেহি হুইয়া-ই ঘুমায়” “ঘোড়ার গাড়ি আমাদের এলাকায় এতোটা প্রয়োজনীয় বাহন যে, খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোর অনেকেই এ পেশায় আগ্রহী হয়ে উঠছে এবং দৈনিক গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা উপার্জন করা যায় ও করে এ গাড়ি দিয়ে”- কথাগুলো ধলাপাড়া ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ শরিফুল ইসলাম শরীফের।

ঘাটাইল উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সোনিয়া আক্তার রুমি বলেন, “ঘাটাইলের পাহাড়ী এলাকাগুলোতে সত্যি-ই ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার অনেক। আমরা মালিকদের ঘোড়ার পরিচর্যা ও রোগ বিষয়ে বরাবর-ই সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়ে আসছি। তবে, যেহেতু ঘোড়ার কোন খামার করা হয় না তাই বিচ্ছিন্নভাবে যারা ঘোড়া পালন করছেন সরকারিভাবে তাদের কোন অনুদান দেওয়ার সুযোগ নেই”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap