হালান্ডের ম্যাজিকে জিতল ম্যানসিটি

ক্রীড়া ডেস্কঃ হোক না ম্যানচেস্টার ডার্বি, কিন্তু আর্লিং হাল্যান্ডের কাছে এটা ছিল অন্য আট-দশটা ম্যাচের মতোই এবং স্বভাবজাতভাবে ভাঙলেন আরেকটি রেকর্ড। ৬-৩ গোলে জয়ের ম্যাচে নিজে করলেন তিন গোল, আরেক হ্যাটট্রিক পাওয়া ফিল ফোডেনকে বানিয়ে দিলেন দুটি।

বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে আসার পর থেকেই আলোচনায় হাল্যান্ড। প্রত্যেক ম্যাচ শেষে তাকে নিয়ে গুণকীর্তন করতে হচ্ছে কোচ পেপ গার্দিওলাকে। এটা তো তার রুটিন কাজ, গত সেপ্টেম্বরে সেভিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচ শেষে ২২ বছর বয়সী স্ট্রাইকারকে নিয়ে স্প্যানিশ কোচ বলেন, ‘আমি এটা বলতে ভালোবাসি এবং খেলা শেষে প্রতিটি প্রেস কনফারেন্সে তাকে ও তার গোল নিয়ে কথা বলা রুটিন হয়ে গেছে। আশা করবো, সে এই রুটিন ধরে রাখবে। সংখ্যাই কথা বলে। সবসময় মনে হয় সে আরও গোল করতে পারে।’

না, থেমে যাননি হাল্যান্ড। তার মাঠে নামা মানেই গোল হবেই। শুয়ে, লাফিয়ে কিংবা দাঁড়িয়ে, প্রয়োজনে অ্যাক্রোবেটদের মতো কসরত করে জাল কাঁপাচ্ছেন। প্রতিপক্ষের রক্ষণ চূর্ণবিচূর্ণ করা যেন তার জন্য তুড়ি মারার মতো কাজ। সেটাই করলেন এই মৌসুমের প্রথম ম্যানচেস্টার ডার্বিতে। হ্যাটট্রিক করলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। এ নিয়ে প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে টানা তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার, যা আর কেউ কোনোদিন করতে পারেননি। ক্রিস্টাল প্যালেস ও নটিংহ্যাম ফরেস্টের বিপক্ষে এর আগে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে গোল করেন তিনি।

প্রিমিয়ার লিগে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করা প্রথম সিটি খেলোয়াড়ও হাল্যান্ড। লিগে তিন হ্যাটট্রিকও করেছেন সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে। মাইকেল ওয়েনের ৪৮ ম্যাচে হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড পেছনে ফেলেছেন মাত্র ৮ ম্যাচ খেলে, যা করতে বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর লেগেছিল ২৩২ ম্যাচ!

মাত্র ১১ ম্যাচ খেলে ১৭ গোল হাল্যান্ডের। মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চওড়া চেহারার কারণে ‘বিস্ট’ মানে দানব আখ্যা পান। শুধু চেহারাই নয়, পারফরম্যান্সও তাকে ‘দানবীয়’ মর্যাদা এনে দিচ্ছে। সামনে যেই আসুক না কেন, পায়ে বল পড়লেই জাল কাঁপাচ্ছেন হাল্যান্ড।

এই তো গত মাসে সাবেক ক্লাব ডর্টমুন্ডে গিয়েও ছাড় দেননি তিনি। শেষ দিকে তার অবিশ্বাস্য অ্যাক্রোবেটিক গোল হতবাক করে দিয়েছিল উপস্থিত সবাইকে। তার মাঝে একই সঙ্গে ইয়োহান ক্রুইফ ও জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচকে দেখতে পেয়েছিলেন গার্দিওলা, ‘সম্ভবত যারা আমাকে চেনে, তারা জানে আমার জীবনে একজন ব্যক্তি, মেন্টর হিসেবে ইয়োহন ক্রুইফের প্রভাব কতটা এবং ন্যু ক্যাম্পে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে বার্সেলোনার হয়ে অবিশ্বাস্য এক গোল করেছিলেন। আর্লিংয়ের গোল করার মুহূর্তটিও ছিল একই রকমের। আমি স্মরণ করছি আমার প্রিয় বন্ধু ইব্রাহিমোভিচকে, এরকম উঁচুতে পা তুলে গোল করার সামর্থ্য ছিল তার এবং আর্লিংও একই কাজ করলো।’

হাল্যান্ডকে নিয়ে তার বক্তব্য, ‘আমি মনে করি এটা তার স্বভাব, সে ইলাস্টিক, অনেক নমনীয় এবং যোগাযোগ তৈরি করে জালে বল রাখতে পারে সে।’

ম্যানচেস্টার ডার্বিতে এই শিষ্যের কীর্তির পর গার্দিওলা বললেন, ‘সংখ্যাই তার হয়ে কথা বলে। এখানে আগেও সে এটা করেছে। সবসময় আমরা আমাদের পরিবেশে তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করি। সে সবসময় ক্ষুধার্ত এবং লড়াকু। সংখ্যাটা আতঙ্কিত করার মতো।’

সাবেক ইউনাইটেড ও সিটি গোলকিপার পিটার শুমেইখেল হাল্যান্ডের মাঝে একসঙ্গে শীর্ষ স্ট্রাইকারদের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন, ‘হাল্যান্ডের দিকে যখন দেখবেন, আপনি বিভিন্ন খেলোয়াড়কে দেখতে পাবেন। জ্লাতানের মতো গোল এবং রোনালদোও আছে তার মধ্যে। আপনি একজনের মাঝে শীর্ষ স্ট্রাইকারদের দেখতে পাবেন। এ কারণেই সে খুব বিপজ্জনক। অনেক সেরা স্ট্রাইকারদের সে দেখেছে এবং তারা সবাই একজন খেলোয়াড়ের মধ্যে ঢুকে গেছে।’

চ্যাম্পিয়নস লিগে ২৫ গোল করা সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা ম্যাচ শেষে বললেন, ‘আমি আগে কখনও তিন হোম ম্যাচে তিনটি হ্যাটট্রিক করিনি। এটা অসাধারণ। আত্মবিশ্বাস দারুণ, সবসময়ের মতো। ম্যানচেস্টার ডার্বির কদিন আগে আমার মনে হচ্ছিল বিশেষ কিছু হতে যাচ্ছে এবং হয়েও গেলো। তাই ভালো লাগছে। এমন ম্যাচে আমি খেলতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap