বিশেষ প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের সখীপুরে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রাচীনতম নির্দশন ফকির বাড়ি মসজিদ। অনন্য স্থাপত্য শিল্পের এই মসজিদটি মোঘল আমলের শেষ দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। উপজেলার কচুয়া গ্রামের দেওয়ান বাড়িতে দেড়শ বছরের বেশি সময় ধরে আটটি গম্বুজ নিয়ে এখনও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ইটের গুঁড়া ও চুনাপাথর।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান হাবিবুর রহমান (৮৬) এসব তথ্য জানান।
দেওয়ান হাবিবুর রহমান আরও জানান, দেওয়ান পরিবারের পূর্বপুরুষ পীরে কামেল হযরত শাহ্সূফি মো. গোমর আলী দেওয়ান রহ. (জন্ম ১১৭২- মৃত্যু ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ,) ও (জন্ম ১৭৬৫-মৃত্যু ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ) মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তিনি পার্শ্ববর্তী বাসাইল উপজেলার করটিয়া পাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
জানা যায়, এই মসজিদের জন্য প্রায় পাঁচ একর জমি ওয়াকফ করে দেওয়া হয়েছে। মসজিদের পাশেই রয়েছে বিশাল পুকুর। পুকুরের চারপাশে নানা প্রজাতির গাছপালা। আছে কবরস্থান। যেখানে ঘুমিয়ে রয়েছেন হযরত শাহ্সূফি মো. গোমর আলী দেওয়ানের ছেলেসহ পরবর্তী বংশধর। মসজিদের পাশে বিশাল এক ঈদগাহ মাঠ। যেখানে প্রতি ঈদের নামাজে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মুসুল্লি জমায়েত হন। এই মসজিদের ভেতরে একসঙ্গে প্রায় তিনশ মুসুল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়া যেকোন ওয়াক্তিয়া নামাজে শতাধিক মুসুল্লি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
মসজিদের ভেতরে প্রতিদিন সকালে নিয়মিত কুরআন শিক্ষা দেন পেশ ইমাম আইন উদ্দিন। তিনি এমন একটি প্রাচীন মসজিদের ইমামতি করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন।
মসজিদের প্রতিটি দেয়াল ৪০ ইঞ্চি পুরুত্বের। যার ভেতর-বাইরে নানা কারুকাজ খচিত। চোখ জুড়ানো বিস্ময়কর এই প্রাচীন মসজিদের পিলার গুলোতে কোন প্রকার লোহা বা রড ব্যবহার করা হয়নি বলে জানায় প্রবীণ মুসুল্লিরা। মসজিদের ছাদে বড় ও ছোট মিলিয়ে আটটি গম্বুজ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
এই মসজিদে দেওয়ান পরিবারে ছয় থেকে সাত প্রজন্ম নামাজ পড়ে আসছেন। আদম মুসুল্লি’র ছেলে গোমর আলী দেওয়ান (রহ.), তাঁর ছেলে দেওয়ান জিয়ারত আলী ফকির, তাঁর ছেলে দেওয়ান ইব্রাহিম আলী, তাঁর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান হাবিবুর রহমান, তাঁর ছেলে বর্তমানে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বাদলসহ তাঁর ছেলে ও ভাতিজা যাঁরা দেওয়ান বংশের বর্তমান প্রজন্ম তাঁরাও নামাজ আদায় করেন এই মসজিদে।
মসজিদটির বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান হাবিবুর রহমান জানান, আমার বয়স এখন ৮৫/৮৬ বছর। আমার যেদিন জন্ম হয়, ওইদিনই আমার দাদা দেওয়ান জিয়ারত আলী ফকির মারা যান। এই মসজিদটি আমার দাদার বাবা অর্থাৎ আমার তালই গোমর আলী দেওয়ান নির্মাণ করেছিলেন। তাই বলা যায় এটি প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে। যা এখনও অক্ষত রয়েছে এবং কোন ফাটল ধরে নাই। তারপরও মাঝেমধ্যে চুনকামসহ যত্নসহকারে মেরামত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তৎকালীন সময়ে সখীপুর তথা এর আশেপাশে কোন নির্মাণ শ্রমিক বা প্রকৌশলী পাওয়া যেতো না। যে কারণে নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি মোগলদের শেষ সময়ের শেষ কাজ।
দেওয়ান বংশের সুযোগ্য উত্তরসূরী নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বাদল বলেন, পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থাপনাটি (মসজিদ) স্থানীয়দের কাছে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়। আমার জানামতে এই মসজিদের সমসাময়িক বা এর আদলে আর কোন মসজিদ সখীপুরে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
Leave a Reply