নিজস্ব প্রতিনিধিঃ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি কার্ড নবায়ন, লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন এবং দোকান ও গুদাম পরিদর্শনে ঘুষ দাবীসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঘাটাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুক্তা রানী সাহার বিরুদ্ধে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ডিলাররা এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ১৬ আগস্ট খাদ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের আলোকে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিদের্শে টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তিনজন ডিলার; গৌরচন্দ্র নন্দী, নুরুল ইসলাম ও নিরঞ্জন ভৌমিক। তাঁরা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার নানা অনিয়ম দুর্নীতি ঘুষ দাবীর অভিযোগ এনে পৃথক পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলায় ১০ টাকা কেজি (বর্তমানে ১৫ টাকা) দরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ১২৯ জন। কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় চলছে নতুন কার্ড ইস্যু ও নবায়নের কাজ। কার্ড নবায়নে হতদরিদ্র ওই সকল কার্ডধারী থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা দাবি করেছেন মুক্তা রানী। যার টাকার অংক ৮ লাখ ৬৪ হাজার। এ ছাড়াও রাইচ মিলের লাইসেন্স নবায়ন, নতুন লাইসেন্স ইস্যু, ফুড গ্রেইন লাইসেন্স, গুদামে চাল সরবরাহ, সরবরাহের চুক্তি, জামানত বিমুক্তির সময় এবং মিল পরিদর্শনের সময় কাল্পনিক মজুদ দাবী করে ঘুষ দাবী করেন। চালকল মালিক সমিতির সভাপতি গৌরচন্দ্র নন্দীর করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, চালের ডিও ইস্যু করার সময় ডিও প্রতি এক হাজার টাকা, গুদামে চাল সরবরাহের ক্ষেত্রে টন প্রতি ৩০০ টাকা, মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ১০০ টাকা দিতে হয়। লাইসেন্স নবায়নের জন্য ৫ হাজার টাকা, চাল সরবরাহের চুক্তির সময় ২ হাজার টাকা দিলে রানী কোনো কাগজপত্রে সই করেন না। ডিলারদের দোকান ও গুদাম পরিদর্শনের সময় এক হাজার টাকা দিলে ডিলারশীপ বাতিলের হুমকি দেন। সম্প্রতি দুইজনের ডিলারশীপ বাতিল করে এক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে দুইজন নতুন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জ্ঞাত আয় বহিঃভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন টাঙ্গাইল জেলার সমন্মিত কার্যালয়ের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ঘাটাইলে যোগদানের আগে ২০২১ সালে মুক্তা রানী সাহা কর্মরত ছিলেন একই জেলার ভূয়াপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেখানেও গুদামে চাল কেলেংকারীর সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ওই উপজেলার খাদ্য গুদাম থেকে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল পাচার করা হয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ৬৪০ বস্তা চাল। বিষয়টি গোপনে জানতে পেরে তৎকালিন ইউএনও মোছাঃ ইশরাত জাহান মধ্যেরাতে ২৮০ বস্তা চাল জব্দ করেন। ওই সময় গুদামের নৈশ্যপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা আল আমীন জানিয়েছিলেন তাঁর স্যারের নির্দেশেই ৬৪০ বস্তা চাল ট্রাকে লোড করা হয়। এ নিয়ে ওই সময় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে টাঙ্গাইল জেলার বাহিরে পদায়ন করার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু জেলার বাহিরে নয় বরং ভূয়াপুরের প¦ার্শবর্তী ঘাটাইল উপজেলায় বদলি হয়ে আসেন তিনি।
এদিকে রানীর বিরুদ্ধে ঘাটাইলের তিনজনের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিদের্শে টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জেলার সহকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোয়েতাছেমুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, টাঙ্গাইল এলএসডি’র সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান ও সখিপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তি দেবনাথ। কমিটি চলতি মাসের ১৭ তারিখ বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করবেন বলে চিঠি দিয়ে পক্ষদ্বয়কে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুক্তা রানী সাহা জানান, তাঁর বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা। এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে তিনি জরিত নন। ভূয়াপুর উপজেলায় চাল কেলেঙকারির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি আপনার সম্পৃক্তাতা পেয়ে আপনাকে জেলার বাহিরে পদায়ন করার সুপারিশ করা হয়েছিল এরপরও আপনি ঘাটাইলে কর্মরত কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চেয়েছেন তাই আছি।
টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেনকে (০১৯১২- ৮৮৪৪১১) মুঠোফোনে না পেয়ে কথা হয় জেলার সহকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোয়েতাছেমুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, ঘাটাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুক্তা রানী সাহার বিরুদ্ধে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান তাঁকে করা হয়েছে। তদন্ত করে যথাসময়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
Leave a Reply