টাঙ্গাইলে সড়ক সংস্কারে ধীরগতি যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল-আয়নাপুর সড়কের সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে যাত্রীসাধারণ সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ব্যস্ততম এ সড়কটির ৯ কিলোমিটার আর এস-সুমন জেভি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও গত এক বছরে তারা ২৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সড়কে নিম্নমানের সমগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রতিদিন টাঙ্গাইলের উত্তরও পশ্চিমাঞ্চল এবং পাশ্ববর্তী কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। খানা খন্দকে চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় প্রায় দেড় বছর আগে এলজিইডি মোড় থেকে আয়নাপুর পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেয়। আর এই কাজটি পায় এস-সুমন জেভি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় যাত্রী ও এলাকাবাসীর ভোগান্তি বেড়েই চলেছে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে।

টাঙ্গাইল এলজিইডি সূত্র জানায়, সেকেন্ড রুবাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (আরটিআইপি-২) আওতায় টাঙ্গাইল এলজিইডি মোড় থেকে আয়নাপুর পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ১০ কোটি ৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত সংস্কার কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় আর এস-সুমন জেভি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। গত বছরের ২১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কাজটি চলতি বছরের ২০ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা ছিলো। নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র ২৩ শতাংশ কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছে। ইতোমধ্যে ঠিকদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দেড় কোটি টাকা পরিশোধও করেছে এলজিইডি। এছাড়াও ক্যাম্প সাইটের বর্জ্য অপসারণ এবং বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ৪০ হাজার টাকা করে, ধূলা নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৮ হাজার ৫৮০ টাকা, পানির গুণগত মান পরীক্ষা জন্য ২ হাজার টাকা ও কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৩ হাজার টাকা ধরা আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সড়কে সদুল্লাপুর থেকে দিঘিবিল পর্যন্ত ও বৈল্লা বাজার থেকে এলজিইডি মোড় পর্যন্ত খোয়া ফেলানোর কাজ শেষ হয়েছে। অনেক জায়গায় এখনও কাজ ধরা হয়নি। প্রায় দেড় মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, যে অংশে খোয়া ফেলানো হয়েছে তা খুবই নিম্নমানের। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে নির্ধারিত সময়ে সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ হচ্ছে না।

দিঘিবিল গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশের সড়কের যে অংশটুকু আগে ভাল ছিলো। সেখানে তারা সংস্কার কাজ শুরু করে। এছাড়াও উত্তরপাশে সেখানে একটু বৃষ্টি হলে পানি জমতো সেখানে কোনো কাজই করেনি। বৃষ্টির পর আমরা সড়কে দাঁড়িয়েই থাকতাম গর্থে উল্টে পড়া সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল তুলে দিতে। এখানে দুর্ঘটনায় তিন জনের হাত ও এক জনের পা ভেঙেছে। তারপরও সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ হয়নি।’

আয়নাপুর গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাবিনা আক্তার বলেন, ‘আমি টাঙ্গাইল শহরের প্রাইভেট পড়তে যাই। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় যেতে ও আসতে অনেক কষ্ট হয়। ফলে রাতে ভালোমতো পড়তে পারি না। এর আগেও বৃষ্টির পর এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে স্কুল ড্রেস ও ব্যাগ নষ্ট হয়েছিলো। আমরা দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’

মোটরসাইকেল চালক হুমায়ন সিকদার বলেন, ‘এই সড়কটি বর্তমানে দুর্ভোগের কারণে পরিণত হয়েছে। এ সড়কে চলাচল করতে কষ্ট হয়। টাঙ্গাইলের অন্য সড়কে এমন কষ্ট হয় না।’

গালা গ্রামের কাশেম মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে খোয়া ফেলেছে তার চেয়ে পোড়া মাটিও অনেক শক্তিশালী। দুই মাস আগে তারা আমাদের স্কুল মাঠে পিচের ড্রাম রেখেছে। কাজ না করায় সেই ড্রাম গুলোর ওপরে বালির আস্তর পড়েছে।’

গালা বাজারের ব্যবসায়ী হাবিব মিয়া বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সড়কে পানি দেওয়ার কথা থাকলেও তারা পানি দেন না। প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা নিজেদের অর্থায়নে দিনে ৪/৫ বার সড়কে পানি দেই। পানি না দিলে ধুলার কারণে ব্যবসা করতে পারি না।’

সিএনজি অটোরিকশা চালক রফিক মিয়া ও শিপন আহমেদ বলেন, ‘আয়নাপুর-টাঙ্গাইল সড়ক দিনে ৬/৭ বার যাতায়াত করতে হয়। যা আয় করি, দিন শেষে বেশির ভাগ টাকা গাড়ি সার্ভিসিং করতে লেগে যায়। সরকার বরাদ্দ দিলেও ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি এই সড়কটির।’

এস-সুমন জেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার ইমরুল কায়েস বলেন, ‘এ পর্যন্ত সড়কটির ২৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আরও দুই মাস সময় পাওয়া যাবে। তিন শিফট প্রদ্ধতিতে কাজ না করলে নির্ধারিত সময়ে বাকি কাজ শেষ হবে না। এছাড়া সড়কের যেসব জায়গায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছিলো অফিস থেকে বলার পর তা অপসারণ করা হয়েছে।’

টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে। তাদের কার্পেটিং এর কাজ শেষ হলে ৫০ ভাগ কাজ শেষ হবে। কিন্তু এখনও কার্পেটিং করেনি। তারা আমাদের জানিয়েছে দ্রুত কার্পেটিং এর কাজ শেষ করবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap