ক্রীড়া ডেস্কঃ নতুন বলে প্রথম দুই ডেলিভারিতে তাসকিন আহমেদের জোড়া সাফল্য। শুরুতেই প্রতিপক্ষের মাথায় আঘাত। মাঝে ক্রমাগত ভালো বোলিংয়ে চাপে রাখলেন ব্যাটসম্যানদের। শেষটায় ফিরে এসে শেষ দিকে দুই ব্যাটসম্যানের উইকেট। নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিং ইনিংসের ‘মাথার পর লেজ কেটে’ বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জয় এনে দিলেন তাসকিন। ক্যারিয়ার সেরা ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক তিনি।
ব্যাটিংয়ে মাঝারিমানের পুঁজি পাওয়ায় বোলারদের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তাসকিনের আক্রমণের পর গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত আফিফ-শান্ত। সাকিবের এক ওভারেই দুই রান আউট। আরেক পেসার হাসান মাহমুদ নিজের কারিশমা দেখালেন নিয়মিত বিরতিতে। দীর্ঘদিন নিষ্প্রভ হয়ে থাকা মোস্তাফিজ আলো ছড়ালেন।
সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, বোলারদের ভালো পারফরম্যান্সে এবং ফিল্ডিংয়ে মুগ্ধতা ছড়ানো বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসকে ১৪৫ রানের টার্গেট দিয়ে ১৩৫ রানে আটকে দেয়। হোবার্টে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৯ রানে। ১৫ বছর পর বাংলাদেশ বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয়ের দেখা পেল। এর আগে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
নতুন বল ও উপমহাদেশের বাইরের কন্ডিশনে তাসকিন বেশ কয়েক বছর ধরেই সাফল্য পেয়ে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতা আজ দেখা মিললো হোবার্টের ২২ গজে। লেন্থ ডেলিভারিতে সুইং আদায় করে প্রথম দুই বলে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান বিক্রমজিৎ সিং ও বাস ডি লিডকে। সেই ধাক্কা সামলে নিতে পারেননি পরের ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে চাপ বেড়ে যাওয়ায় খেই হারায় তারা।
সাকিব চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এলে তাকে প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান ম্যাক্স ও’ডাউড। কিন্ত পরের বল মিড উইকেটে পাঠিয়ে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে আফিফের ক্ষিপ্রতায় হার মানতে হয় ডাচ ব্যাটসম্যানকে। সাকিব যখন স্টাম্প ভাঙেন তখন প্রায় মাঝক্রিজে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যান। অভিজ্ঞ টম কুপার বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছিলেন ম্যাচের আগে। কিন্তু ডানহাতি ব্যাটসম্যান কোনও বল না খেলেই রান আউট। ডিপ কভার থেকে শান্তর থ্রোতে সোহানের দুর্দান্ত কিপিংয়ে নেদারল্যান্ডস হারায় চতুর্থ উইকেট।
পরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেবল কলিন আক্যারম্যান লড়াই করেন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে বাংলাদেশকে ভয়ও দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু তাসকিন নিজের শেষ ওভারে তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন। ৪৮ বলে ৬২ রান করেন আক্যারম্যান। ৬টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। একই ওভারে ডানহাতি পেসার তিন বল আগে শারিজ আহমেদকে ফেরান। পাঁচ উইকেট পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু নতুন ব্যাটসম্যান পল ফন মিকেরেন তার ইয়র্কার কোনোমতে সামলে নেন।
তাসকিনের চার উইকেটের সঙ্গে হাসান মাহমুদ দুই উইকেট পেয়েছেন। সাকিব ও সৌম্যর শিকার একটি করে উইকেট। মোস্তাফিজ উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে ২০ রান নিয়ে ফেরার বার্তা দিয়ে রেখেছেন।
বোলারদের সৌজন্যে ম্যাচে পার পেয়ে গেলেও ব্যাটসম্যানদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেই হবে। শুরুর ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি শান্ত, সৌম্য। ইনিংসের মধ্যভাগে লিটন, সাকিবের ব্যাটও হাসেনি। দলকে উদ্ধার করেন আফিফ হোসেন। তাকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন সোহান। আর শেষটা রাঙান মোসাদ্দেক। তাতে মাঝারি মানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ। দুই বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য ও শান্ত ৫ ওভারে তুলে নেন ৪৩ রান। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাংলাদেশ খায় ধাক্কা। এলোমেলো শটে সৌম্য ১৪ বলে ১৪ রান করে আউট হন। এরপর শান্ত ২০ বলে ২৫ রানে থেমে যান। লিটন ও সাকিবের ব্যাটে নির্ভর করছিল বাংলাদেশের ইনিংস কোথায় গিয়ে থামবে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে তারা দুজনই ছিলেন ছন্দে। কিন্তু পরপর দুই ওভারে লিটন ও সাকিব আউট হলে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ।
লোগান ফন বিকের হঠাৎ ছোবল দেওয়া বল পুল করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন ৯ রান করা লিটন। এরপর ১৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার শারিজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দারুণ দক্ষতায় লাফিয়ে সে ক্যাচ হাতে জমান ডি লিড। নিজের সামর্থ্য দেখানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ইয়াসির আলী। কিন্তু লুফে নিতে ব্যর্থ। ইনিংস বড় করতে গিয়ে তাকে ৫ রানে থামিয়ে দেন পেসার ফন মিকেরেন।
এরপর শুরু হয় আফিফ ও সোহানের লড়াই। আফিফ সহজাত ব্যাটিংয়ে উইকেটের চারিপাশে শট খেলে রান তোলেন দ্রুত। সোহান তাকে সঙ্গ দিচ্ছেলেন সিঙ্গেল-ডাবলসে। তাদের ৪৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশ বিপদমুক্ত হয়। কিন্তু বড় সংগ্রহের পথে হাঁটতে পারেননি। সোহান ডি লিডের বল ফাইন লেগের উপর দিয়ে উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন ১৮ বলে ১৩ রান করেন। ওই ওভারে আফিফও সাজঘরে ফেরেন। ২৭ বলে দুটি করে ছয়-চারে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করে আফিফ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।
সেখান থেকে বাংলাদেশের ইনিংসের শেষটা রাঙান মোসাদ্দেক। ডাউন দ্য উইকেটে এসে দুটি দৃষ্টিনন্দন চার হাঁকান ১৯তম ওভারে। শেষ ওভারে ইনসাইড আউট শটে ছক্কা হাঁকান মিড অন দিয়ে। তার ১২ বলে ২০ রানের সুবাদেই বাংলাদেশ শেষটায় আত্মবিশ্বাস পায়।
এরপর বোলারদের নৈপুণ্যে মিলে যায় প্রত্যাশিত জয়।
Leave a Reply