নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ পানির (সুপেয় পানি) কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে নূন্যতম ২০০ টাকায় পৌরবাসী ঘরে-ঘরে এ সুবিধা পাবে। প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সুপেয় পানি নিশ্চিতের পাশাপাশি স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ হচ্ছে।
বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। কাজ শেষ হলে এ নতুন সেবার আওতায় আসবে ৪০ হাজার ৪৬০ জন পৌরবাসী। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকায় পাইপ লাইনে পানি সরবরাহ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ফিক্যাল স্লাজ ম্যানেজমেন্টসহ সার্বিক স্যানিটেশনের ব্যবস্থা, ওয়াটার ও স্যানিটেশন কার্যক্রমে জরুরী সহায়তা, বসত-বাড়িতে উন্নত ল্যাট্রিন নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ মোট ৭৫ কোটি টাকায় অন্যান্য সুবিধা থাকবে পৌর উন্নয়নের কার্যক্রমে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপেয় পানির কাজ চলমান। ৬০০ কিউবিক লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অর্থাৎ ৬ লাখ লিটার পানি শোধন হবে ওভারহেড পানির ট্যাংকে। সুবিধাভোগীদের জন্য প্রতিদিন ১৮ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও রিজার্ভ ট্যাংকেও জমা থাকবে ১২ লাখ লিটার পানি। এ কার্যক্রমের নতুন সেবায় আরেক এক ধাপ এগিয়ে যাবে পৌরসভা।
পৌরসভা সূত্রে আরও জানা গেছে, পানি সরবরাহ চালু হলে পৌরবাসীদের ব্যক্তিগত মোটরে পানি তোলায় বিদ্যুৎ বিলের অতিরিক্ত খরচ কমে যাবে। ইতোমধ্যে পৌরসভা কার্যালয়ে নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিয়ে আয়রন, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ ও ক্লোরাইডমুক্ত নিরাপদ পানির সংযোগ নিতে মাইকিং করে প্রচারণা হয়েছে। যা ২০০ টাকায় আবেদন করা যাচ্ছে। বিগত ২০২০ সালের (১৬ মার্চে) আনুষ্ঠানিভাবে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
জানা যায়, সুপেয় পানির জন্য ওভারহেড পানির ট্যাংক পৌর সদরের ধান হাঁটিতে ৭০ ফুট উচ্চতায় নির্মাণাধীন। ট্যাংকে পানি উত্তোলনে আড়াই কিলোমিটার দূরে চাতুটিয়া এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে পানির পাম্প। বিভিন্ন যন্ত্র ও নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে শ্রমিকরা। মাটির নিচ দিয়ে করা হয়েছে পাইপ লাইনে পানির সংযোগ। পানি মাপাতে কয়েক স্থানে রয়েছে মিটার। সুপেয় পানি পেতে আবেদনকারী হাসমত আলী বলেন, মাত্র ২০০ টাকা জমা দিয়ে নিরাপদ পানির জন্য আবেদন করা যাচ্ছে। সংযোগ পেলে ব্যবহৃত পানি মাসিক বিলে পরিশোধ করতে হবে। অপর আবেদনকারী পলাশ হোসেন বলেন, মাইকে প্রচারণা শুনে আবেদন করেছি। সরকারের এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই। পৌরবাসীর দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। এ নতুন সুবিধায় পৌরসভা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
সুপেয় পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দি সিভিল ইনঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের দায়িত্বরত ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, গুরুত্ব সহকারে কাজগুলো করা হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালের জুনে এ কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। সব ঠিক থাকলে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ সম্পন্ন হবে আশা করি।
পৌরসভার দায়িত্বরত উপসহকারি প্রকৌশলী কবির হোসেন বলেন, কাজ শেষ হলে বাসা-বাড়িতে পানির সংযোগ দেয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৩’শত পরিবার পানির সংযোগে আবেদন করেছে। দিনে তিন বেলা পানি সরবরাহ করা হবে। উপকারভোগীরা ব্যক্তিগত রিজার্ভ ট্যাংকিতে পানি মজুদ রাখতে পারবে।
এ বিষয়ে ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকল বলেন, এ নতুন সেবার প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়াও একটি ডাম্পিং স্টেশনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। সেটি চালু হলেই শহরের সব ময়লা সেখানে শোধনের জন্য যাবে। এগুলো দিয়ে জৈব সার এবং গ্যাস তৈরি হবে। পৌরশহরের উন্নয়নে সকল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply